× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পাটুরিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি

দেশ বিদেশ

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ইদুল ফিতরের পরে এবার ঈদুল আজহাতেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি তাদের। ঈদের চার দিন বাকি থাকলেও দুর্ভোগের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় পাটুরিয়া ঘাটে। নাড়ির টানে ছুটে চলা হাজার হাজার যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আটকে আছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ঘাট ছাড়িয়ে যানবাহনের লম্বা লাইন প্রায় ৩ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এই অবস্থার জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষ পদ্মায় তীব্র স্রোত আর শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্য সংকটের প্রভাবে পাটুরিয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপকে দায়ী করছেন। সরজমিন পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীবাহী বাস-কোচ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো সারি সারি ভাবে অপেক্ষা করছে পাটুরিয়া ঘাটে। আর দুই-তিনদিন ধরে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে আছে প্রায় ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।
১১টি রো রো বড় ফেরি এবং ৯টি ছোট ও মাঝারি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে যানবাহন। কিন্তু ফেরি পর্যাপ্ত থাকলেও পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে না পারায় ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এতে করে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি পড়ে যাওয়ায়  দেখা দিচ্ছে যানজট আর দীর্ঘ লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়তে থাকায় পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে যাত্রী বহনকারী বাস,  কোচ, মাইক্রো, প্রাইভেটকারের পৃথক লম্বা লাইন ছড়িয়ে গেছে প্রায় ৩ কিলোমিটার। যার কারণে সকাল থেকে তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  বাসের ভেতরে বসেই সময় কাটাতে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে। এতে সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং নারী যাত্রীরা।
 এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে শনিবার সকাল থেকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস সহ ছোট যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঘাট ছাড়িয়ে ছোট গাড়ির লাইন প্রায় ৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে। আর ছোট গাড়ির পারাপারের জন্য ৫ নং ফেরিঘাট ব্যবহার করা হচ্ছে।  
খুলনার যাত্রী আমির হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে পরিবার নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বসে আছি। ঘাট থেকে আমার গাড়ির দূরত্ব কমপক্ষে ৪ কিলোমিটার। ১২টা বেজে গেলেও ফেরির কাছে যেতে পারিনি। আর কত সময় ঘাটে পড়ে থাকতে হবে জানি না।
যশোরের যাত্রী আমিনুর রহমান বলেন,তীব্র গরমে তিন ঘণ্টা ধরে ছেলেমেয়ে নিয়ে বাসের ভেতর বসে থাকা কতটা কষ্ট তা কেউ বোঝে না।  কোনো ঈদেই স্বস্তিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারিনি। ভেবেছিলাম ঈদের চারদিন বাকি থাকতে গেলে ঘাটে যানজট থাকবে না। কিন্তু না এখন দেখি আরো বেশি যানজট।
সাতক্ষীরার যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণ যাত্রীরা বাসের ভেতর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও কারো কোনো যায় আসে না। অথচ কোনো ভিআইপি গাড়ি ঘাটে আসা মাত্রই তাদের আদর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পারাপার করে দেয়া  হয়।  স্ত্রী ও ৩ বছরের শিশু বাচ্চা নিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসের ভেতর অপেক্ষায় আছি।  
ইগল  পরিবহনের যাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থী আরফিন আক্তার বলেন, সকাল পৌনে ১০টায় ঘাটে এসেছি।   ফেরিতে উঠতে আর কত সময় লাগবে তা এক মাত্র আল্লাহই জানেন।  
হানিফ পরিবহনের যাত্রী  আবিদুর রহমান পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে বসে আছেন। বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পরও ফেরির দেখা পাচ্ছি না। নিজের কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু শিশু বাচ্চারা গাড়ির ভেতর গরমে কাঁদছে।  এমন এক দুর্বিষহ যন্ত্রণায় ঘাটে পড়ে আছি এ থেকে কখন নিস্তার পাবো জানি না।
বাসযাত্রী  শফিকুল ইসলাম জানালেন, কোনো ঈদে একটু স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারি না। চরম দুর্ভোগ আর কষ্টকে সাথী করেই ফিরতে হয় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ শেয়ার করার জন্য।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা সেক্টরের এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, পদ্মায় তীব্র স্রোত আর শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্য সংকটের প্রভাবে পাটুরিয়ায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ পড়েছে। আগে একটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে সময় লাগতো ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। এখন দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। তবে ফেরির কোনো সমস্যা নেই। ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। নদী শান্ত থাকলে এবং অন্য রুটের গাড়ি এখান দিয়ে পারাপার না হলে পাটুরিয়া ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতো। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস পারাপার করায় ঘাট এলাকায় ট্রাকগুলো সাময়িক আটকা রয়েছে। আর ছোট গাড়ির চাপ বড় গাড়ির চাইতে বেশি। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্রও ভয়াবহ। সেখানে গত কয়েক দিন ধরেই যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। শনিবার সকাল থেকে শত শত যানবাহন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আটকে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যানবাহনগুলো ফেরি পার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঘাট কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া কোরবানির গরু  বোঝাই ট্রাক পারাপারেও সময় বেশি লাগছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির গরু নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে ঢাকার গাবতলীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে  যাতায়াত করতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া নৌ-পথের দূরত্ব প্রায়  চার কিলোমিটার। এই চার কিলোমিটার পথ স্রোতের কারণে অতিক্রম করতে ফেরিগুলোকে ওভার স্প্রিডে চলতে হচ্ছে। আর স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ রুটের বেশির ভাগ  ফেরি চলাচলের মতো শক্তি না থাকায়  অত্যন্ত ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী বহনকারী যানবাহন পাটুরিয়া ঘাটে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়ে পারাপার হচ্ছে ফেরি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর