× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতা কারা?

এক্সক্লুসিভ

আল-আমিন
২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার

দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন পন্থায় সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে আসছে দেশে। ওইসব অস্ত্র আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাঠ কাঁপানো সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, গডফাদার, রাজনৈতিক দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার, চরমপন্থি দলের সদস্য, ভূমিদস্যু, বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালানকারী, মিলিট্যান্স দলের সদস্য, জলদস্যু, ডাকাত দলের সদস্য, বড় মাদক ব্যবসায়ী ও ছিঁচকে চোরদের সরবরাহ করা হয়। দেশে এরাই মূলত প্রধান অবৈধ অস্ত্রের মূল ক্রেতা।

এসব ক্রেতারা রিভলবার, বন্দুক, কাটা রাইফেল, শুটারগান, পিস্তল, পাইপগান এবং এরসঙ্গে ব্যবহৃত গুলিও কিনে। সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অস্ত্রগুলো কেনাবেচা হয়। অস্ত্র চোরাচালানকারী চক্র কাউকে আবার বিভিন্ন মেয়াদে অস্ত্র ভাড়া দেয়। ব্যবহার শেষে তারা আবার ফেরত নেয়।
অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতারা তাদের অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার প্রায় প্রকাশ্যেই ব্যবহার করছে। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গেল বছরের একাধিক খুনাখুনির ঘটনায় যেসব অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে সেইসব অস্ত্র অবৈধভাবে কেনা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেসব অস্ত্রের কোনো লাইসেন্স ছিল না।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, অবিলম্বে এই অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক হবে। সমাজের ভেতর থেকেই এর বিরুদ্ধে নজরদারি এবং কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অস্ত্র চোরাচালানকারী এবং এর ক্রেতাদের চিহ্নিত করার জন্য তারা অভিযান চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় মানবজমিনকে জানান, অবৈধ অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন করে। তবে এর ব্যবহার আগের চেয়ে কমে এসেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং এর ক্রেতাদের ধরতে সার্বক্ষণিক অভিযান ও নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরানুল হাসান জানান, আগে আন্ডার ওয়ার্ল্ড যারা নিয়ন্ত্রণ করতো তারা অবৈধ অস্ত্রের বড় ক্রেতা ছিল। চোরাচালানকারীরা তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র বেশি বিক্রয় করতো। এরপর তারা তাদের এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতো। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক মুফদি মাহমুদ খান বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠা পাবার পর থেকে অবৈধ অস্ত্র বিক্রয়কারী ও ক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার টিম এবং র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্রের মূল উৎস হচ্ছে দেশের সীমান্ত এলাকা। সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক অস্ত্র কারখানাও। সীমান্তের গহিন অরণ্যে বা চর এলাকায় ওইসব কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব অস্ত্র লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। অন্তরালে থাকার কারণে কেউ অস্ত্র সম্বন্ধে কেউ না জানার কারণে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকে অন্ধকারে। তারা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না পেলে অভিযান চালাতে তেমন আগ্রহ পোষণ করেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৯ই জানুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেওটি বাজারে শাকিল (২১) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফী শাওনকে (২৮) গুলি হত্যা করা হয়। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি দিনদুপুরে মেরুল বাড্ডার মাছের আড়তে ঢুকে রবিন গ্রুপের নির্দেশনায় আবুল বাশার নামে আরেক সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২২শে এপ্রিল বাড্ডার বেরাইদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান দুখু প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়। চলতি বছরের ৯ই মে জাগরণী ক্লাবের মধ্যে সন্ত্রাসীরা ঢুকে ডিশ ব্যবসায়ী বাবুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতারাই ওইসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের ৩৫টি জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র চোরাচালানকারীরা অস্ত্র নিয়ে আসছে দেশে। এরপর তারা বিভিন্ন যোগসূত্রের মাধ্যমে কয়েকহাত বদলের মাধ্যমে সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, গডফাদার, রাজনৈতিক দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার, চরমপন্থি দলের সদস্য, ভূমিদস্যু, বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালানকারী, মিলিট্যান্স দলের সদস্য, জলদস্যু, ডাকাত দলের সদস্য, বড় মাদক ব্যবসায়ী ও ছিঁচকে চোরদের সরবরাহ করে। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণকারীরা তাদের সদস্যদের হাতে নিত্য নতুন অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ওইসব অস্ত্র ক্রয় করে। নির্বাচন আসলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তরা অবৈধ অস্ত্র কেনার এক প্রতিযোগিতায় নামে।

সূত্র জানায়, এইসব ক্রেতা তাদের নিজেদের বলয়ে অভ্যন্তরীণ আধিপত্য বিস্তারের জন্য অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে থাকে। এছাড়াও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র কিনছে। এজন্য বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হলেও আয়ের উৎস থাকায় তারা মোটা অঙ্ক খরচ করেই অস্ত্র কিনে থাকে। ওইসব ক্রেতারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, জমি দখল ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য অবৈধভাবে অস্ত্র কিনছে। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন পন্থায় সেগুলো চলে যাচ্ছে হাতে হাতে।

সূত্র জানায়, অনেক ক্রেতা নিজেরা অস্ত্র কিনে সন্ত্রাসীদের ভাড়া দেয়। ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয়। অবৈধ অস্ত্রের সিলের নম্বর ঘষাঘষি করে নিখুঁতভাবে বৈধ অস্ত্রের নম্বর বসিয়ে ব্যবহারের কৌশল অবলম্বন করা হয়। পুলিশের তালিকায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ২০০ জন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ীর তালিকা রয়েছে। তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামও। ডিএমপির অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার টিম সূত্রে জানা গেছে, একসময় আঞ্চলিক গডফাদার, ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতো। কিন্তু, সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীরাও এর ব্যবহার শুরু করে। মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ধার হলেও বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে নানা উপায়ে অপরাধীদের হাতে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ মানবজমিনকে জানান, চোরাচালানকারীরা অবৈধভাবে বিভিন্নস্থানে অস্ত্র বিক্রয় করে থাকে। ওইসব অস্ত্র দুর্বৃত্তদের হাতে যায়। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মধ্যে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বিক্রেতা ও ক্রেতাকে আইনের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর