× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় এখনো ছটফট করেন পারভীন

এক্সক্লুসিভ

হাফিজ উদ্দিন, সাভার থেকে
২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার

শরীরে ১৮শ’ স্প্লিন্টার নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সাভারের মাহবুবা পারভিন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন সাভারের মাহবুবা। জনসভার ঠিক সামনে ডান পাশে ট্রাকের চাকার কাছে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনছিলেন।

একপর্যায়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে প্রাণঘাতী গ্রেনেড। সঙ্গে চলে গুলিবর্ষণও। হামলায় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৬ জন নিহত হন। আহত হয় কয়েক শ’ মানুষ। আহতদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন শরীরে অসংখ্য গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তারাও।
অনেকেই আবার চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও খুব একটা ভালো নেই সাভারের মাহবুবা পারভীন। শরীরে ১৮শ’ স্প্লিন্টার নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। তার বাঁ হাত এখনও অচল, চোখে কম দেখেন, ডান কানে কম শোনেন, শরীরের চামড়ার ভেতরে ঘা হয়ে গেছে। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টাও ঘুমাতে পারেন না। আর ঘুমাতে না পারলে সেই মানুষ কখনও সুস্থ থাকতে পারে না বলে জানান মাহবুবা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আমি ছোট একজন মানুষ হয়েও আমার সুন্দর জীবনটা দেশের জন্য এবং আওয়ামী লীগের জন্য উৎসর্গ করতে পেরেছি এতেই আমি খুব তৃপ্ত। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি এটা একটা অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহর রহমত। আমি যখন গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম তখন আমি স্বাক্ষর করতে পারতাম না, টিপসই দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবা পারভীন বলেন, গ্রেনেড হামলার পর বাংলাদেশের চিকিৎসা শেষে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে ২৫ দিন চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এক যুগ পার হয়ে গেছে, এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি।

তবুও অসুস্থ শরীর নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। শরীরে থাকা স্প্ল্লিন্টারের ব্যথার যন্ত্রণা অসহ্য হওয়ায় ঘুমের ঔষুধ খেয়ে রাত কাটাতে হয় তাকে। বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা ভাতা প্রাপ্ত মাহবুবা বলেন, নেত্রী ছাড়া কেউ কোনোদিন আমার খোঁজ খবর নেয়নি। নেত্রী যদি গ্রেনেড হামলায় মারা যেতেন কিংবা আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে এতদিনে মরে যেতাম। প্রাণপ্রিয় নেত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ছেলে যদি কানাডায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তাহলেই আমি বেঁচে থাকবো। অন্যথায় এ পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না। কারণ মন্ত্রী তারানা হালিম কিছুদিন আগে আমার বাসায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। আমি তাদেরকে বলেছি আমার জীবনটা দুই ভাগে ভাগ করেছি। একদিকে আমার গর্ভের দুই সন্তান অন্যদিকে আমার দল আওয়ামী লীগ। আমার প্রশ্ন যাদের শরীরে একটি স্প্লিন্টারও ঢুকল না, এক ফোঁটা রক্তও ঝরলো না তারা আজকে বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক। কিন্তু আমি অসুস্থ মানুষ কখন মরে যাই ঠিক নাই।

তারপরও অনেক কষ্টে মাঝে মাঝেই দলীয় মিটিং মিছিলে যাই। বর্তমানে আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি- মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেন তিনি সিএমএইচে বিনা পয়সায় তার চিকিৎসা করাতে পারেন আর দুই ছেলেকে বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে যেন চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। উল্লেখ্য, মাহবুবা পারভীনের ২ ছেলে আসিফ পারভেজ ও রুশাদ জোবায়ের। স্বামী বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ। বড় ছেলে আসিফ পারভেজ ঢাকা ইউনার্ভিসিটিতে এমবিএ ভর্তি হয়েছে এবং ছোট ছেলে রুশাদ জোবায়ের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আর্কিটেকচার হয়েছে ২০১৪ সালে। অর্থাভাবে সংসারে খরচ যোগাতে স্বামী এম এ মাসুদ বর্তমানে সাভারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর