নানিয়ারচরে ব্রাশফায়ারে ৬ জন নিহত হওয়ার ক্ষত না শুকাতেই খাগড়াছড়িতে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া গত সাত মাসে পাহাড়ে আরো ৩২ খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিবদমান পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, খুন-অপহরণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ অবস্থায় সচেতন মহল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কয়েকশ সন্ত্রাসীর হাতে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। এর অবসান হওয়া দরকার। এদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় গতকাল থেকে খাগড়াছড়িতে যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমদ খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আমর্ড পুলিশ অভিযানে থাকবে। যত দিন সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব হবে না ততদিন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ব্রাশ ফায়ারে হতাহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাহাড়ে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষের অবসান ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায় এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ। অপরদিকে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহতের প্রতিবাদে সোমবার খাগড়াছড়িতে অর্ধবেলা সড়ক অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ (প্রসীত) সমর্থিত তিন পাহাড়ি সংগঠন। আধিপত্য বিস্তারের জেরে শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে স্বর্নিভর বাজারে বিবদমান দুই পাহাড়ি গ্রুপের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন নিহত হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহাদাত হোসেন টিটু জানান, সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় এখনো কোন পক্ষ মামলা করেনি। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তাস্তর করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে চারটি আঞ্চলিক দল সক্রিয় রয়েছে। এগুলো এখন চার ভাগে বিভক্ত। ২০০৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে কেন্দ্র করে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লার্মা ওরফে সন্তু লার্মা’র নেতৃত্বাধীন পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সাথে বিরোধের ফলে সৃষ্টি হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং জেএসএস (জেএসএস-এমএন লারমা) দুটি সংগঠন। গত নভেম্বরে ইউপিডিএফ-(গণতান্ত্রিক) নামে আরো ১টি গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এদের সকলেরই রয়েছে সশস্ত্র ক্যাডার। শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর এসব সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে আত্মঘাতী সংঘর্ষে ৯০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে মারা গেছেন ৩০ জন। গত মে মাসে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেএসএস-এমএন লারমার গ্রুপের সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে তার নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন তার শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে খুন হন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন। এবার সে খুনের পাল্লায় যুক্ত হল আরো ৭ জন।