× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ বিএনপির

শেষের পাতা

কাফি কামাল
২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সম্ভাব্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শতাধিক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বহিষ্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে এনে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতেই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ।

দীর্ঘ এক যুগ পর সক্রিয়ভাবে দলে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও। পাশাপাশি সক্রিয় করা হচ্ছে রাগ-ক্ষোভ-অভিমানে দলে নিষ্ক্রিয় নেতাদের। আগামী আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা। তারা জানান, সপ্তাহখানেক  আগে দলের বহিষ্কৃত নেতাদের একটি তালিকা চেয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

পাশাপাশি তিনি দলের যেসব উপজেলা ও পৌর ইউনিটে দ্বিধা-বিভক্ত ও পৃথক কমিটি রয়েছে তারও একটি তালিকা চেয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এই দুইটি তালিকা প্রণয়নে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। সে অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের কাছে দুটি তালিকা পাঠানো হয়েছে।


এছাড়া দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের ডেকে কথা বলতে মহাসচিবসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। তার আগেই দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সারা দেশের জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ত্যাগী নেতাকর্মী দিয়ে কমিটি ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে নীতিনির্ধারক ফোরাম।

বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কারণে নানা সময়ে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার পক্ষে নীতিনির্ধারক ফোরামের কয়েকজন সদস্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে একটি মতামত দিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনায় ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের নামের তালিকা তৈরি করে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ, সিনিয়র, তুলনামূলকভাবে গৌন অপরাধে বহিষ্কৃত ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানানো নেতাদের নিয়েই প্রথম তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় বহিষ্কৃত নেতার নাম, পদবি, ঠিকানা ও বহিষ্কারের কারণ এবং বহিষ্কারের নির্দেশদাতার নামও উল্লেখ করা হয়েছে। শিগগির দ্বিতীয় আরেকটি তালিকা প্রণয়ন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের কাছে পাঠানো হবে। সে তালিকায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশিরভাগ বহিষ্কৃত নেতার নাম থাকবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়াসহ কয়েকটি সাংগঠনিক জেলায় বেশকিছু উপজেলা ও পৌরসভায় পৃথক কমিটি রয়েছে।

সে কমিটিগুলো কি কারণে বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে কমিটির তালিকায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বহিষ্কৃতদের প্রথম তালিকায় রয়েছে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ এমএ হান্নানের নাম। ২০০৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারাদেশের কিছুদিন পরই তিন প্রত্যাহারের আবেদন জানান। এ নিয়ে তিনি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন, মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছেন। দলে না থাকলেও নেতাকর্মীদের ছেড়ে যাননি তিনি।

সূত্র জানায়, এই আসনের সাবেক এমপি লায়ন হারুন অর রশীদের বিরোধিতার কারণে তার বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিনবারের পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুকে বহিষ্কার করা হয় ২০০৯ সালে। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বিরাগভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছিল বহিষ্কারাদেশ।

শিমুল বিশ্বাসের বিরোধিতার কারণেই জনপ্রিয় এই নেতাকে এখনো দলে ফেরানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দল ছেড়ে যাননি তিনি। প্রভাবশালী শিমুল বিশ্বাসের অরাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পর থেকে পাবনা জেলা বিএনপি রক্ষা কমিটি নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ২০১৪ সালের ২১শে মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ও বিএনপি নেতা আমিন শরীফকে বহিষ্কার করা হয়।

জেলা বিএনপি সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তাদের এই বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। নাটোর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আবদুল মান্নান ও শহর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিউক ও জেলা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা নয়নকে ২০১২ সালের ২৬ অক্টোবর বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১২ই নভেম্বর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার ২১ নেতার নামে মামলা করেছিলেন বহিষ্কৃত চার নেতা। ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারকে ২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই বহিষ্কার করা হয়। জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারা দলের এই নেতাকে বহিষ্কার করেন।

তাদের বাধার কারণে এখন পর্যন্ত তাকে দলে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী নেতাদের রোষানলে পড়ে দলের অনেক জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাই বহিষ্কারাদেশ পেয়েছেন। বহিষ্কৃত এসব নেতা নানা সময় দেন-দরবার এমনকি লিখিত আবেদন করেও দলে ফিরতে পারেননি। তবে এবার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত নেতাদের অনেকেই নানা সময়ে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েক দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির সময়ে কিছু আবেদন হারিয়ে গেছে। কিন্তু যারা আবেদন করেছিলেন তাদের পুনরায় আবেদন করার বার্তা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পদপদবিসহ নানা কারণে দলের ওপর অভিমান করে বিভিন্ন সময়ে নিষ্ক্রিয় হয়েছেন বহু নেতা।

বিশেষ করে আশি ও নব্বইয়ের দশকের সাবেক ছাত্রনেতাদের সংখ্যাই বেশি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদেরও একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সে তালিকায় ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থি কিছু নেতার নামও থাকছে। তবে বহিষ্কৃত, নিষ্ক্রিয় ও দ্বিধা-বিভক্ত কমিটির তালিকা প্রণয়নের কাজটি হয়েছে নীরবে। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে বিএনপির পতাকা তলে দেখা যাবে বহু পুরনো মুখ। নিজ নিজ অবস্থান থেকে যারা সাংগঠনিকভাবে, ভোটের মাঠে ও সামাজিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর