× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একজন কফি আনান

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) আগস্ট ২০, ২০১৮, সোমবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ ও আফ্রিকান হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কফি আনান। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর দুই মেয়াদে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। কর্তব্যরত অবস্থায়ই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ২০০১ সালে। অবসরের পর তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে জার্মান ভাষাভাষী একটি গ্রামে বাস করছিলেন। শনিবার ৮০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন একসময়কার বিশ্বের শীর্ষ এ কূটনীতিক। কফি আনানের পুরো নাম কফি আত্তা আনান। ১৯৩৮ সালে ঘানায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ইফুয়া আত্তা নামে তার এক যমজ বোনও ছিল।
তার জন্মস্থান কুসামি ঘানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। কফি আনানের বাবা ছিলেন ঘানার একজন প্রাদেশিক গভর্নর। ঘানাতেই তিনি লেখাপড়া শেষ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকালেস্টার কলেজ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাজেট অফিসার হিসেবে। ১৯৬৫ সালে তিনি তিতি আলাকিজাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে। ১৯৮৩ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কফি আনান বর্তমান স্ত্রী নেইন লাগেরগ্রেনকে বিয়ে করেন। কফি আনান যখন জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্বে তখন পৃথিবী অনেক কঠিন সময় পার করছে। এ সময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার নানা উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। ইরাক যুদ্ধ ও এইডস যখন মহামারী রূপ ধারণ করেছে তখন তিনি জাতিসংঘকে নিয়ে এর সমাধানের চেষ্টা করেন। এ জন্য ২০০১ সালে তিনি যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। কফি আনান দীর্ঘ ৪ দশক জাতিসংঘে কাজ করেছেন। তিনিই প্রথম মহাসচিব যে কিনা সাংগঠনিক পদ থেকে জাতিসংঘের প্রধান হয়েছেন। ইরাক যুদ্ধের সমালোচনা করতে গিয়ে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। এ সময় দেশটির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক যুদ্ধকে অবৈধ বলে অভিহিত করেন তিনি। এর ফল ভোগ করতে হয় তাকে ২০০৫ সালে। সে বছর মহাসচিব হিসেবে কলঙ্কিত হন কফি আনান। খাদ্যের বিনিময়ে তেল কেলেঙ্কারি বিষয়ক এক তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে ও তার ছেলেকে অভিযুক্ত করা হয়। অনেকেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদে জড়ানোতেই তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন করে তদন্ত করা হলে কফি আনানের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে তার ছেলে কোজোকে ওই লাভজনক কন্ট্রাক্টটি পেতে সাহায্য করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে কফি আনান এ কথা স্বীকার করে নেন। এই কেলেঙ্কারি ছাড়া কফি আনান জাতিসংঘের সব থেকে জনপ্রিয় মহাসচিব হিসেবেই পদত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে কূটনীতির ‘রকস্টার’ বলে অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা শেষ করার পরেও কফি আনান তার কূটনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। কেনিয়ার রাইলা ওডিঙ্গা ও মাওয়াই কিবাকিদের মধ্যে সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতা করেন তিনি। সিরিয়া যুদ্ধে তিনি ছিলেন আরব লীগ ও জাতিসংঘের বিশেষ দূত। তিনি ৭ বছর ধরে চলমান সিরিয়া যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও আন্তর্জাতিক কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কফি আনান। আনান কমিশন নামে খ্যাত এ কমিশন রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। সমগ্র পৃথিবী থেকেই কফি আনান পেয়েছেন অসামান্য সম্মান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তার জ্ঞান ও সাহসের প্রশংসা করেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল কফি আনানকে ভিন্নধর্মী কূটনীতিক অভিহিত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি স্থাপনে তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো কিছু না বললেও জাতিসংঘে দেশটির দূত নিকি হ্যালি শোক জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কফি আনান ক্লান্তিহীনভাবে আমাদের এক রাখতে কাজ করে গেছেন। মানুষের অধিকার রক্ষায় নিজেকে কখনো থামিয়ে রাখেননি তিনি। কফি আনানের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু বলেন, তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। আমাদের মহাদেশকে তিনি বিশ্বের কাছে উদার ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বিবৃতিতে বলেছেন, এক কথায় কফি আনানই ছিলেন জাতিসংঘ। এছাড়া হিলারি ক্লিনটন ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ অনেক বিশ্বনেতাই কফি আনানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর