× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা কমছে

বিশ্বজমিন

স্টিভ চিমা ও জিওফ্রি ম্যাকডোনাল্ড
(৫ বছর আগে) সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮, শনিবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে ক্রমেই অস্থিতিশীলতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের ফল কি হবে তা অনিশ্চিত। বাংলাদেশে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) নতুন জনমত জরিপে অবশ্য কিছু চিত্র উঠে এসেছে, যেগুলো হয়তো আগামী নির্বাচনের প্রচারাভিযান, ফলাফল ও নির্বাচন পরবর্তী স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রের ওপর জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে আসন্ন নির্বাচন সকল রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
আইআরআই’র জরিপ থেকে অবশ্য বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিতও মিলেছে। জরিপে দেখা গেছে ৬২ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন দেশ সঠিক পথে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা অগ্রসরমান অর্থনীতি ও বর্ধিত উন্নয়নের কথা বলছেন। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ৬৯ শতাংশই ইতিবাচক নম্বর দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ‘কিছুটা ভালো’ কিংবা ‘খুবই ভালো’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

তবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে করা জরিপের তুলনায় এই জরিপে ইতিবাচক আশাবাদের মাত্রা বরং কমেছে। বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে বলে যারা মনে করেন, তাদের সংখ্যা এই ১২ মাসেই ১৩ শতাংশ কমে গেছে। অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ‘খুবই ভালো’ পর্যায়ে আছে, এমন মতামতধারীর হার যথাক্রমে ২৬, ২৭ ও ১৯ পয়েন্ট কমেছে। এছাড়া সেনাবাহিনী, পুলিশ, উচ্চ আদালত ও নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্ট মানুষের সংখ্যাও কমেছে। ২১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। ১৬ শতাংশ মনে করেন অর্থনীতি।
ঐতিহাসিকভাবেই গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের অনুরাগ বেশ প্রবল। তবে মানুষের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি বেশ বিভক্ত। মাত্র ৫১ শতাংশ মনে করেন দেশের গণতন্ত্র ‘কিছুটা ভালো’ বা ‘খুবই ভালো।’ আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ‘খুব বেশি’ এমন মানুষের হার ১৮ শতাংশ কমে ৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, মাত্র ৩২ শতাংশ মনে করেন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। বেশিরভাগ উত্তরদাতাই এই প্রশ্নের জবাব জানেন না কিংবা উত্তর দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এই জনমত জরিপে ২০১৭ সালের আগস্টে আইআরআই পরিচালিত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) গবেষণায় উঠে আসা ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সরকারী প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স, গণতন্ত্র ও অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রত্যন্ত সিলেট অঞ্চলের একজন বলেন, ‘পুলিশের দায়িত্ব হলো দেশের নিয়ম-নীতি বজায় রাখা। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। নির্দোষ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করছে।’
বরিশালের প্রত্যন্ত এলাকার এক নারী বলেন, ‘এখন জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করেই সব হচ্ছে। যদি দেশে গণতন্ত্র থাকতো আমরা তাহলে ভোট দিতে পারতাম।’
ওদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কর্মসংস্থানহীনতা প্রকট রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারী বলেন, ‘এখন কোনো চাকরি নেই। কেউ চাকরি পাচ্ছে না।’ রংপুর শহরের একজন পুরুষ আলোচক বলেন, ‘আমি মনে করি এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা করা খুবই কঠিন। আগে যেমনটা পারতাম এখন ততটা ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি না। কিছু রাজনীতিক আমাদেরকে নির্যাতন করেন। নির্যাতন মানে, তারা আমাদের কাছ থেকে চাঁদা চায়। হুমকি দেয়। ফলে চাঁদা দিতে আমরা বাধ্য।’
মোটাদাগে, আইআরআই’র গতবছরের জনমত উপাত্ত থেকে দেখা যায় দৃশ্যত ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও, ভেতরে ভেতরে মানুষের মধ্যে সরকারী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবেই আগামী নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় রাজনৈতিক বিতর্কে প্রভাব ফেলবে।
ডিসেম্বরে যেই দলই জিতুক না কেন, এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও শাসক শ্রেণির জন্য জনসন্তোষের জোয়ার ঠেকানো এবং মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন, প্রাণবন্ত অসহিংস প্রতিদ্বন্দ্বীতার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে পুনর্জ্জীবিত করার একটি সুযোগ।
(স্টিভ চিমা হলেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা বিষয়ক আবাসিক প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। জিওফ্রি ম্যাকডোনাল্ড হলেন প্রতিষ্ঠানটির গণতন্ত্র ও সুশাসন বিষয়ক প্রধান গবেষক। তাদের এই নিবন্ধ প্রভাবশালী মার্কিন থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর