ব্যারিস্টার সালাম। এ নামেই পরিচিতি তার। পুরো নাম মোহাম্মদ আবদুস সালাম। গ্রামের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রায়বান। শহরতলির আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা ওই আইনজ্ঞ দুনিয়ার দেশে দেশে মানুষের সর্বজনীন অধিকার সুমন্নত রাখার মানসে কাজ করেন। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেই স্কুল জীবন থেকে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেখা পেয়েছিলেন দক্ষিণ সুরমাতে। সেই থেকে তার আদর্শ ধারণ করে আছেন।
ছাত্রদলের মেধাবী মুখ আবদুস সালাম ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকালে ছিলেন ছাত্রনেতা। পরবর্তীতে সিলেট সদর থানা বিএনপি, দক্ষিণ সুরমা, জেলা বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। সালামের ভাষ্য মতে, ‘কেবল দেশেই নয়, যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক পদে কাজ করেছি। সেখানে দলকে সুসংগঠিত করতে আমার অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। দেশনায়ক তারেক রহমানের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছি।’ রাজনীতির মানুষ ব্যারিস্টার সালাম পেশাগত কাজে যুক্ত রয়েছেন হাইকোর্ট থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন আইন, গবেষণা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন। ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ), ক্রিমিনাল বার অ্যাসোসিয়েশন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ ইউকে এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রিয়ার সদস্য তিনি। মানবাধিকার সংগঠন ল’ ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল-এর চেয়ারম্যান সালামের এখন পূর্ণ মনোযোগ বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা গঠিত সিলেট-৩ আসনে। ওই এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে বদ্ধপরিকর তিনি। মানবজমিন কার্যালয়ে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের দলের মনোনয়ন, জনগণের আস্থা, আকাঙ্ক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে জন রায় পাওয়ার বিষয়ে তিনি দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বলেন, দুনিয়ার বহু দেশে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এবার আমার এলাকার মানুষদের সেবায় আরো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হতে চাই। তৃণমূলে থাকা প্রান্তিক সেই মানুষজন, যাদের সঙ্গে অনেকে হাত মেলাতে লজ্জাবোধ করেন, কেউবা অর্ধেক হাত মিলিয়ে সাবান খুঁজেন, মহান সংসদে আমি তাদের কথা বলতে চাই। সালাম বলেন, গত ৯ বছরে সংসদে এত জনবিরোধী আইন হয়েছে, সেগুলোর সংশোধন-সংযোজন বা পরিবর্তনে এমপি হয়ে আমি ভূমিকা রাখতে চাই। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সালাম বলেন, আমি পড়াশোনা করেছি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার পর হাইস্কুল হয়ে সিলেট সরকারি কলেজে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছি। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু কখনই জন্ম মাটিকে ভুলে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করিনি। সব সময় মানুষের সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। এলাকার যেকোনো উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত রেখেছি। গ্রামের আশপাশের ৩টি স্কুল, একাধিক মাদরাসা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচর্যাসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নানাভাবে যুক্ত জানিয়ে সালাম বলেন- এ কারণেও এলাকার মানুষ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আমি আশাবাদী আমার দল মানুষের চাওয়ার মূল্যায়ন করবে এবং আমাকে মনোনীত করে দল এবং এলাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবে। পারিবারিক ঐতিহ্য তার দলের মনোনয়ন এবং এমপি হওয়ার পথে সহায়ক হবে দাবি করে সালাম বলেন- শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত এক মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম (১৯৬৫ সালে)। আমার পিতা মরহুম আলহাজ মাহমুদ মিয়া ছিলেন একজন নিরলস সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী এবং সালিশ বিচারে স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি গ্রাম সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার ভাইয়েরা প্রায় সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং দেশ-বিদেশে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পাড়াশোনা শেষ করে আমি দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি এবং পাশাপাশি সিলেট জেলা জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দিই। সেই থেকে আমি আমার পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এলাকার শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধার বিকাশ এবং মননশীলতা গঠনে কাজ করছি। তাছাড়া দক্ষিণ সুরমা কলেজের উন্নয়নে আমার সাধ্যমতো কাজ করেছি। এগুলো আমার পরবর্তী পথচলায় সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস করি। কেন মানুষ তাকে ভোট দেবে? সেই প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সালাম বলেন, আমার এলাকার মানুষ অত্যন্ত সহজভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। এখানে কোনো কুটিলতা নেই। তারা মনে করেন আমি এমপি হলে তাদের কাছাকাছিই থাকবো। কোনো অভিজাত এলাকায় আমার বাসা হবে না। সালাম বলেন, কিছু রাজনীতিবিদের আচরণে এলাকার মানুষের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, নেতা মানেই তাকে ছুঁতে বা পেতে ঘুরতে হবে। আমি সেটা ভাঙ্গতে চাই। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সালাম বলেন, আমি বিশ্বাস করি ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমি এটাও বিশ্বাস করি সমস্ত্ত চক্রান্ত ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একদিন দেশে ফিরবেন এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবেন। সালামের মতে, নির্বাচন যখনই হয় তা অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর তা হলে কেউ বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী দলের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। দলীয় রাজনীতির প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল সালাম বারবারই বলছিলেন- ওয়ান ইলেভেনের সময় বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা প্রতিহত করতে তিনি দেশে বিদেশে সোচ্চার ছিলেন। তার মতে, আমরা সেই চেষ্টা সফল হয়েছিল। কিন্তু কষ্ট লেগেছে, যখন আমার এলাকা সিলেট-৩ তথা দেশবাসী এখানকার এক রাজনীতিবিদকে দেখেছে ত্রাণের বিস্কুট ঘোড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে। এখন দেখছি ওই রাজনীতিবিদই ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে বিদেশে বসে রঙ্গীন পানীয়ের পার্টি হোস্ট করছেন। সালাম বলেন, ওয়ান ইলেভেনের চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসা আওয়ামী দুঃশাসন ৯ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে। জাতি এ থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, সময় এসেছে দীর্ঘ সময় ধরে গুমকৃত নেতা ইলিয়াস আলী, দিনারসহ অন্যদের সন্ধানে সরকারকে বাধ্য করার।