× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রস্তুত সিলেট বিএনপি

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার

আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয় সিলেট বিএনপিকে মানসিক শক্তি দিয়েছে। এই শক্তিই এখন সিলেট বিএনপির বড় পুঁজি। আর এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে সিলেটের ৬ আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নেতারা। মোটামুটি লেবেল প্লেয়িং মাঠ পেলেই বাজিমাত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। একই সঙ্গে আন্দোলনের জন্যও তারা প্রস্তুত। ইতিমধ্যে সিলেট বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে তারা এই মুহূর্তে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবছেন না। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের যে কর্মসূচি আসবে সেটি তারা বেগবান করতে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।

সিলেট বিএনপির অন্যতম শক্তিশালী দুর্গ।
সাইফুর রহমানের নির্দেশে যখন সিলেটে বিএনপি পরিচালিত হয়েছিল ওই সময় ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন দলের নেতারা। একই সময় রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়ান গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীও। ২০১২ সালে এম ইলিয়াস আলী গুমের মধ্য দিয়ে সিলেট বিএনপিতে বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়। ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবির আন্দোলন করতে গিয়ে একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত হন নেতারা। এরপরও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আন্দোলনে পিছু হটেনি তারা। গোটা দেশের মতো সিলেটেও তীব্র আন্দোলন চালিয়েছেন নেতারা।

বিনিময়ে সিনিয়র নেতারাও কারাবরণ করেছেন। আর বিএনপির মাঝারি সারির নেতা থেকে শুরু করে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী মামলার আসামি হয়েছেন। কয়েকশ’ নেতাকর্মী ইতিমধ্যে কারাবরণ করেছেন। এই অবস্থায় বিএনপি বিগত উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন নির্বাচন ও পৌরসভাগুলোর মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এতে সিলেট বিভাগেই আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি বাজিমাত করেন বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা। সিলেট-২ আসনে উপজেলা নির্বাচন ও ইউনিয়ন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা জয় পান বেশি।

বিরোধী দল থাকাকালে ২০১৩ সালেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রের আসনে জয়ী হয় বিএনপি। বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন। এরই ধারাবাহিকতা চলে এসেছে ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত। গত ৩০শে জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জয় ঘরে তোলেন। এ নির্বাচন ছিল সিলেটে নজিরবিহীন নির্বাচন। কারণ এবারের সিটি নির্বাচনের মতো গোলযোগপূর্ণ নির্বাচন সিলেটে অতীতে কখনো হয়নি। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল সিলেট বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এই পরীক্ষায়ও বিএনপি সিলেটে শতভাগ সফলতা পেয়েছে। এর আগে সিলেটে কোন্দল চিরতরে মিটমাট করতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়েছিল বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় সিলেটে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলরদের ভোটে জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়।

আর কাউন্সিলের পর সব বলয়ের নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নির্বাচনের আগে ঘোষণা করা হয় ছাত্রদলের কমিটি। জাতীয় নির্বাচনের আগে যুবদলের কমিটি গঠন করা হতে পারে। সিলেট বিএনপি আগের তুলনায় অনেক বেশি গোছালো। দলের ভেতরে প্রতিযোগিতা থাকলেও কোন্দল নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সিলেটের ৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অভাব নেই। একেক আসনে ৪-৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। কোনো কোনো আসনে রয়েছেন তার চেয়েও বেশি। প্রার্থী সংখ্যা বেশি থাকলেও বিএনপির ভেতরে প্রকাশ্য কোনো বিরোধ নেই।

বরং দলীয় ফোরামে নেতারা সবাই একাট্টা। কেউ কারও বিরুদ্ধে এখনো বিষোদগারে নামেননি। সিটি নির্বাচনের পর থেকে সিলেট বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে আরো গতি এসেছে। আগের তুলনায় রাজপথে আন্দোলনে বেশিসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকছেন। মিছিল-মিটিংয়ে সরব অংশগ্রহণ করছেন। সর্বশেষ নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঞ্চ নির্মাণ করে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। আর এই অনশন কর্মসূচি উপলক্ষে  আয়োজিত সমাবেশে সিলেট বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন- দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। এজন্য যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে সেখানে তারা সর্বাত্মকভাবে মাঠে থাকবেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি মনে করে আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, এরপর নির্বাচন। আমরা আন্দোলনে যেমনি মাঠে সক্রিয় রয়েছি, তেমনি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত। দুটিকে আমরা সমানভাবে নিচ্ছি। তিনি বলেন, সিলেট জেলার ৬টি আসনেই বিএনপির প্রার্থীদের অভাব নেই। প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এই মাঠে সক্রিয় থাকাকে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা মনে করছি। তিনি বলেন, সিলেট বিএনপির ভেতরে এখন প্রতিযোগিতা আছে কিন্তু কোনো দ্বন্দ্ব নেই। নির্বাচনে ও আন্দোলনেও সবাই ঐক্যবদ্ধ।

এ কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ, উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে সিলেটে বিএনপির কর্মীরা সফলতা পেয়েছেন। এদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জের পৌরসভার উপ-নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে বিএনপি এক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলেও পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়। তবে এই নির্বাচনকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না নেতারা। এ কারণে তারা আর প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বিশেষ করে সিলেট-১ আসন ও সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল বিএনপি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনসহ সিনিয়র নেতারা মাঠ গোছানোর কাজ করেছিলেন।

এই কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ কারণে আন্দোলনের পাশাপাশি সিলেটে বিএনপি নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে দাবি করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন। গতকাল বিকালে তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আমরা সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ইতিমধ্যে সেন্টার কমিটি গঠন করে রেখেছি। সিলেট সদরেও এই কাজ এখন চলমান। আন্দোলন ও নির্বাচন প্রস্তুতি একসঙ্গে চলায় বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা বেশি উজ্জীবিত বলে দাবি করেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর