× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুমিল্লায় ৫ মামলায় বিএনপি’র ১৭৩ নেতাকর্মী আসামি, গ্রেপ্তার ৩৯

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে অস্ত্র, সন্ত্রাসবিরোধী এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা পাঁচ মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতের ১৭৩ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ  করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গায়েবী ঘটনা ও ঘটনাস্থল উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন এলাকার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে- সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা মামলায় দোষীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।     

জানা যায়, সদর দক্ষিণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর পিতার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় ওই উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি পাইকপাড়া গ্রামের আবদুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক নাগরীপাড়া গ্রামের মহিবুল্লাহ, একই গ্রামের বিল্লাল হোসেন, আমির হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, রাসেল, মিনার আলম, মাসুদ, ইয়াকুব আলী, বিল্লাল হোসেন, সোহাগ, আক্তার হোসেন, নুরুল আমিন, শরিফুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, জহির, এরশাদ, গনিয়াখালী গ্রামের ইউনুছ আলী ও জয়নগর গ্রামের সালাউদ্দীন। মামলার বাদী থানার এসআই অঞ্জন কুমার জানান, গ্রেপ্তারকৃত মুহিবুল্লাহর নিকট থেকে একটি একনলা বন্দুুক ও ৩ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা হয়েছে।

এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগ্রামের বাড়িতে তাঁর বাবা মরহুম নোয়াব হায়দার চৌধুরীর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়।
এর আগে গত ৮ই সেপ্টেম্বর ওই উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২২জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও দিশাবন্দ গ্রামের হারুনুর রশীদ, সালমানপুর গ্রামের আবু মুসা, ঢুলিপাড়ার জয়নাল, সদর উপজেলার মিন্নতনগর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও উজিরপুর গ্রামের জাকির হোসেন। মামলার বাদী এসআই নজরুল ইসলাম গাজী জানান, লামপুর রাস্তার মাথায় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাঙচুর করার জন্য একত্রিত হয়েছে- এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। ককটেল ও ককটেল বিস্ফোরণের আলামত এবং এক লিটার পেট্রোল উদ্ধারসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া গত ২৮শে আগস্ট জামায়াতের মকবুল আহমাদ, আবদুল কাদের ও মহিলাকর্মীসহ ২৩ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী এসআই খাদেমুল বাহার জানান, নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও আলামত জব্দ করা হয়েছে।

গত ১৭ই আগস্ট বিএনপি’র নিজাম উদ্দিন, আবদুল মান্নান, আশকার মিয়া ও অঙ্গসংগঠনের ৪৬ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। তবে এ মামলাটি ‘শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোনা’য় উল্লেখ করে গায়েবী ঘটনাস্থল দেখিয়ে দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মামলার বাদী এসআই কোমল কুমার সাহা জানান, ‘শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোনায় একত্রিত হয়ে বিএনপি নেত্রীকে মুক্ত করাসহ সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে নাশকতার পরিকল্পনা, রেললাইনের পাশে পেট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ অন্যান্য অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৪ জনকে গ্রেপ্তারসহ পেট্রোল, লোহার রড ও বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।’ তবে স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান এজিএম শফিকুর রহমান জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’ স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক নেতা জানান, ‘ওই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু সেখানে গায়েবী ঘটনাস্থল দেখিয়ে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে।’     

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্রয়াত পিতার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে এবং পুলিশ ১৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশে গায়েবী ঘটনা, ঘটনাস্থল ও মিথ্যা অভিযোগে যেভাবে একের পর এক মামলা সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা নিন্দনীয়।’ তিনিসহ স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক নেতা জানান, ‘এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাদের পরিবারের নারী-শিশু সদস্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় মানবেতর দিনাতিপাত করছে। এ ধরনের মামলা ও হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার বন্ধ করার জন্য তারা সরকারের নিকট দাবি জানান।’

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো. মামুন অর রশিদ পিপিএম সাংবাদিকদের জানান, ‘সুস্পষ্ট ঘটনা ও অভিযোগের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করার অভিযোগ সঠিক নয়।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর