× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খালেদাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তির পরামর্শ মেডিকেল বোর্ডের

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল বিএসএমএমইউ’র    পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল-হারুন এক ব্রিফিংয়ে একথা জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলই ভালো হবে বলে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। যদি উনি (খালেদা জিয়া) ভর্তি হতে চান তাহলে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড শনিবার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। গতকাল সকালে তারা প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, মেডিকেল বোর্ড যেটা পেয়েছেন, নতুন কোনো সিরিয়াস উপসর্গ যোগ হওয়া, এটা হয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আগে থেকেই রিউম্যাটয়েডআর্থ্রাইটিস (গেঁটে বাত) রয়েছে।
সে কারণে দুই হাতে ও পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। এক চোখে এলার্জি সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড উনাকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে এসেছেন। এরপরেও যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড তাকে এমন একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন যেখানে সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পরামর্শই দেয়া হয়েছে বলে জানান আবদুল্লাহ আল হারুন। হাসপাতালের পরিচালক জানান, মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট গতকাল বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এদিকে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরী  প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতাল পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, তার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে। হাত-পা কাঁপে। তাকে কারাগারে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না। হাসপাতালে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড শনিবার কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী, চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলী ও ফিজিকেল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ। শনিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে কারা কর্তৃপক্ষ জানায় রোববার প্রতিবেদন দেয়া হবে। এদিকে বিএনপির দাবি মেডিকেল বোর্ডে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক না রাখায় দলটির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরকারদলীয় চিকিৎসক দিয়ে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হবে না


সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ড দিয়ে খালেদা জিয়ার উপযুক্ত ও সঠিক চিকিৎসা হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি। সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের ব্যাপারে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। এ ছাড়া মেডিকেল বোর্ড এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে যে পরামর্শ দিয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। সে চিকিৎসাটা হওয়া উচিত তার রোগ ও চিকিৎসার ব্যাপারে আগে থেকে ওয়াকিবহাল এবং তার বিশ্বস্ত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও আমরা সে দাবিই করেছিলাম। কিন্তু সরকার সেটা রাখেনি। ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত প্রথম মেডিকেল বোর্ডও বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সে হাসপাতাল বা সরকারি হাসপাতালের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই। নতুন মেডিকেল বোর্ডও সে পথেই হাঁটলো। এখন কথা হচ্ছে, চিকিৎসক ও হাসপাতালের ওপর আস্থা-বিশ্বাসের বিষয়টি রোগীর নিজের। ফলে এখন চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। এর আগে সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশয় ও অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, আমরা এই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে অসন্তুষ্ট। আমরা মনে করি না, সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎসা হবে। এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা এখনো দাবি করছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যারা করতেন সেসব চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি বোর্ড করা হোক। সেই বোর্ডের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হোক। কারণ তিনি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের কিন্তু সেইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন। আমাদের নেত্রীর দেয়া কিছুসংখ্যক চিকিৎসক, যারা তার চিকিৎসা করে থাকেন এবং সরকারের কিছু চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড করবেন। কিন্তু আমরা হতাশ হয়েছি- যখন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তখন দেখা গেল শুধু সরকারের দেয়া চিকিৎসকদের দিয়েই এই বোর্ড করা হয়েছে।

আমরা মনে করি, সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের দিয়ে যে বোর্ড করা হয়েছে, সেই বোর্ডের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা হবে না। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হচ্ছেন- তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, ২বারের বিরোধী দলীয় নেতা, দেশের ২৩টি আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি, স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক সেনাপ্রধান ও নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের স্ত্রী।

অথচ তিনিই আজ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ৯ই সেপ্টেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির একটি প্রতিনিধি দল কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর আবদুল জলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারি চিকিৎসকদের নিয়ে ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। শনিবার সে বোর্ডের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর