গোটা সমাজ আজ বিভক্ত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কাজী জাফর আহমদ স্মারক গ্রন্থ এবং আমার রাজনীতির ৬০ বছরে জোয়ার-ভাটার কথন’ দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে যে রাজনীতি চলছে এটা বিষাক্ত রাজনীতি। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যেসব শিক্ষক, আইনজীবী ও অন্যান্য পেশাজীবী যুক্ত হয়েছেন তারা বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। শুধু বিষাক্তই নয় আজ গোটা সমাজ বিভক্ত হয়ে গেছে। এমন বিভক্ত সমাজ নিয়ে দেশের অগ্রগতি সম্ভব না। শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মাদরাসা, সাধারণ শিক্ষা ও ইংলিশ মিডিয়াম এই তিনটি ধারা চালু রয়েছে। এই তিন ধারাকে একত্রিত না করতে পারলে শিক্ষায় উন্নতি হবে না।
তিনি বলেন, দেশে ৩০ শতাংশ লোক এখন অশিক্ষিত। এরা দেশের উন্নয়নের জন্য বাধা। ৩৬ থেকে ৩৭ শতাংশ লোক দরিদ্র। এই দরিদ্রদের মধ্যে অর্ধেক আবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। জাতীয় পার্টি (একাংশ) চেয়ারম্যান কাজী জাফরের স্মৃতিচারণ করে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তিনি উদ্যোগী মহান পুরুষ ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন কাজী জাফর। এসময় তিনি বলেন, নীতি-নৈতিকতা ছাড়া রাজনীতি হয় না। কাজী জাফর আহমদ নীতিবান লোক ছিলেন। বর্তমানে দেশের উন্নয়নের জন্য তার মতো লোক দরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি কর্মজীবনে চীনে অবস্থানের সময় কাজী জাফরকে কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছিল। মূলত চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রী স্থাপনে কাজী জাফরের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, আমি কর্মজীবনে চীনের সঙ্গে কাজ করাকালে বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশকে যদি সত্যিকারে সমৃদ্ধশালী হতে হয়, নিরাপত্তার দিক দিয়ে মুক্ত হতে হয় তাহলে চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। আরো দৃঢ়ভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। তাহলে এর মধ্য দিয়ে যেমন আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবো তেমনি নিরাপত্তার দিক দিয়েও শক্তিশালী হবো।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু সংবিধানে বলা আছে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে। সকলের জন্য সমান অধিকার থাকতে হবে। আজকে সংসদ বহাল রেখে যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে এটা জনগণ চায় না। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একটানা ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। তখন কোথায় ছিল সংবিধান। বর্তমানে যারা সংসদে রয়েছেন তারা কেউ কেউ নমিনেশন পর্যন্ত সাবমিট করেননি। অথচ তারা এখন এমপি। এটা কোন সংবিধানে উল্লেখ আছে যে, নমিনেশন সাবমিট না করেও এমপি হওয়া যাবে? আ স ম আবদুর রব বলেন, সময় থাকতে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করুন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন। মনে রাখবেন পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটা ২০১৪ সাল কোনোদিন আসবে না। আজকে শুধু আমরাই আপনার পদত্যাগ চাচ্ছি না। শিশু-কিশোররা রাস্তায় নেমেছে। তারা বলছে- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট চেইঞ্জ’। প্রকাশনা উৎসবে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল কাদের ভূঁইয়া, পানি বিশেষজ্ঞ আতিকুর রহমান, ড. এসআই খান, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী প্রমুখ।