× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সরকারের তৈরি প্রতিবেদন দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড- বিএনপি

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন সরকারেরই তৈরি করা বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, আওয়ামী সরকার ও সরকার প্রধান সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অসুস্থতা চরম শোচনীয় অবস্থায় উপনীত করার চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য স্ববিরোধী ও সরকারের চিন্তার প্রতিফলন। এটা একদেশদর্শী ও সর্বজনীন চিকিৎসা নীতির পরিপন্থি। খালেদা জিয়াকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ড তৈরি করা প্রতিবেদন দিয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে এই একগুঁয়েমি ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসপাতালের পরিচালক সাংবাদিকদের বলেছেন- খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, কোনো আশঙ্কার কারণ নেই।
তাঁর সবধরনের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বিএসএমএমইউ। পরিচালককে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন- খালেদা জিয়ার পুরনো রোগগুলোই তারা পেয়েছেন, অন্য কিছু নয়। রিজভী বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম- দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে সরকার দলের অনুগত বোর্ড সদস্যরা সরকারের পছন্দানুযায়ী পরামর্শ দেবেন এবং সেটিই প্রমাণিত হলো। রিজভী বলেন, সরকারের অনুগত চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কারাগারে দেশনেত্রীকে ২০ মিনিটে তথাকথিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসএমএমইউতে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বলেছি যে, বিএসএমএমইউতে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি নেই। বিশেষায়িত এমআরআই মেশিন নেই। সিটি স্ক্যান করার মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এগুলো বিশেষায়িত হাসপাতালে আছে। এটা বারবার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এটা সরকার কর্ণপাত করছে না। উনি (শেখ হাসিনা) কারাগারে ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। উনার অধিকার আছে কিন্তু অন্যের অধিকার নেই। একজন রোগীকে তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া উচিত, এটি তার মানবাধিকার। সেটি না করে কর্তৃপক্ষ জোর করে নিজেদের পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ জেদেরই বহিঃপ্রকাশ।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশকে যে নিজের জমিদারি মনে করার যে প্রবণতা, সেই প্রবণতা আমরা সরকার ও সরকারপ্রধানের প্রতিটি পদক্ষেপের মধ্যে দেখতে পাই। অবিলম্বে সরকারের গঠিত মেডিকেল বোর্ডে দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করে তাকে বেসরকারি কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল বা গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
সারা দেশে গুম ও ক্রসফায়ার পাল্লা দিয়ে চলছে
রিজভী বলেন, গুম ও ক্রসফায়ার যমজ এই সহিংস সর্বনাশা কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতি করা হয়েছে। সারা দেশে গুম ও ক্রসফায়ার পাল্লা দিয়ে চলছে। বর্তমানে অবৈধ আওয়ামী সরকার আর কোনো উপায় না দেখে গুম ও ক্রসফায়ারের হত্যাকেই নির্ভরযোগ্য মনে করছে, টিকে থাকার শর্ত হিসেবে। হত্যা, নির্যাতন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে অদৃশ্য নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে পথেঘাটে ফেলে দেয়া, সবই ’৭১ এর নবসংস্করণ। তিনি বলেন, শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল থেকে ৩ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবারে যশোরের শার্শা উপজেলা ও কেশবপুর উপজেলায় দু’টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। তারা দু’জন শার্শা থানার একই এলাকার মানুষ। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় মানুষরা বলেছেন সাদা পোশাকধারীরা সাদা মাইক্রোবাসে করে তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভোটারবিহীন সরকার ‘ভয় দেখিয়ে জয় করার কৌশল’ অবলম্বন করতে গিয়েই চালানো হচ্ছে বিচার-বহির্ভূত হত্যার মহৌৎসব ও গুমের মহাধুমধাম। রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আটক করে আটকের বিষয়টি অস্বীকার ও গুম করে দেয়ার ঘটনায় সারা দেশে বিরাজ করছে এক ভয়াল আতঙ্কজনক পরিবেশ। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি রনিকে জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানান। তিনি বলেন, রক্তপাত, হত্যা, মিথ্যাচার, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার জাতক বর্তমান অবৈধ সরকার কর্তৃক প্রতি ক্রসফায়ারে হত্যার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একই রকমের বক্তব্য দেয়। ঠিক তেমনি সবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুমের পরও ‘আমরা জানি না’ বলে একই রকমের বক্তব্য দেয় পুলিশ। যে কোনো সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা বিচার বহির্ভূত ও আইনবিরুদ্ধ। বিচার-বহির্ভূত নরহত্যা ও গুম আইন দ্বারা স্বীকৃত নয় বলেই এই সমস্ত ঘটনা সভ্য দেশগুলোতে ভয়ঙ্কর অপরাধ বলে গণ্য হয়।
মামলা ও গ্রেপ্তার
রিজভী বলেন, সিলেট শহরের সোবহানীঘাট এলাকায় একটি মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে পার্শ্ববর্তী সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাহ্‌হের শামীমের বইড়তে কয়েকজন নেতাকর্মী গেলে তার বাসা ঘিরে ফেলে পুলিশ। সেখান থেকে অকারণে কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে বানোয়াট মামলা দিয়ে আসামি করার জন্য। পুলিশের এ ধরনের ঘৃণ্য কৌশলকে আমি ধিক্কার জানাই। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি শরিফুল আলমের নামে ঢাকায় বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরে পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুুল মান্নান, ৪ নং ওয়ার্ড সম্পাদক শামীম ও ১ নং ওয়ার্ড সম্পাদক মোহাম্মদ আলীসহ আরও কিছু নেতাকর্মীকে হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা একেএম আমিনুল হক (এফসিএ), বিএনপি নির্বাহী কমিটির বাণিজ্য সম্পাদক আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. শামসুজ্জামান মেহেদী, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মশিউর রহমান বিপ্লব, মোহাম্মদ শাহ আলম, ঢাকা মহানগর ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদ হারুনসহ ৭৫ জন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পল্লবী থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মল্লিক ও শ্রমিক দলের সভাপতি মাসুদুর রহমানের বাসায় ডিবি পুলিশ তল্লাশি চালায় এবং মাসুদুর রহমানের ভাতিজাকে তুলে নিয়ে যায়। এছাড়া ফরিদপুর, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরায় নতুন কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুল লতিফ খানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর