× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইয়াবাসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও স্ত্রী শ্যালক আটক

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার

১ হাজার পিস ইয়াবাসহ আইন, বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ। গত রাতে যশোর শহরের ঝুমঝুমপুরস্থ একটি ভাড়া  বাসা থেকে কথিত স্ত্রী ও শ্যালকসহ এসএম ফরিদ আহম্মেদ নামের ওই কর্মকর্তাকে আটক করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানান যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান। আটককৃত এস এম ফরিদ আহম্মেদ আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন। একটি পারিবারিক মামলায় আটকের পর জেলে যাওয়ার কারণে গত ২ মাস আগে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান। এদিকে যশোরে মাদকসহ আটকের ঘটনায় এস এম ফরিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
যশোর কোতোয়ালি থানায় অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান বলেন, খুলনার ছেলে এসএম ফরিদ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তিনি ২ সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ২ সন্তানকে নিয়ে আজিমপুরে সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন। এসএম ফরিদ আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন।
ওই উপসচিব পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র বদলি হলে এসএম ফরিদ একাধিক কর্মকর্তার পিও হিসেবেও কাজ করেছেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি ফরিদ নাট্যাঙ্গনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে নাটক করে থাকেন। এই নাট্যাঙ্গনের সূত্র ধরে দেড় বছর আগে পরিচয় ঘটে মাগুরার মীরপাড়ার আব্দুল হক মোল্যার মেয়ে তামান্না আক্তার পলির সঙ্গে। পলিও নৃত্যশিল্পী হিসেবে ঢাকায় কাজ করতেন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই এক বছর আগে বড় স্ত্রীকে গোপন করে পলিকে বিয়ে করেন। ছোট স্ত্রী পলিকে  নিয়ে প্রথমে ঢাকার মিরপুরে ও পরে মতিঝিলের রেল কলোনিতে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন এসএম ফরহাদ। এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ের পর থেকে এস এম ফরহাদ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে ব্যবহার করে একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তিনি অবাধে বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করার সূত্র ধরে প্রায়ই কক্সবাজার যেতেন এবং সেখান থেকে ইয়াবা নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। তারই সূত্র ধরে চলতি মাসের ১ তারিখে এসএম ফরহাদ ও পলি দম্পতি যশোর শহরতলির ঝুমঝুমপুরে রানার দোতলা বাড়ির একটি ইউনিট মাসিক ৭ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। ওই ভাড়ার বাসা থেকেই গত রাতে কোতোয়ালি পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এসএম ফরহাদ, তার স্ত্রী তামান্না আক্তার পলি ও পলির ভাই আলামিনকে আটক করে। এ সময় তাদের তিনজনের কাছ থেকে পুলিশ ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ বিষয়ে পুলিশ কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় এসএম ফরিদ দাবি করেন তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি বলেন, প্রেমের সূত্র ধরে এক বছর আগে পলিকে তিনি বিয়ে করেন। ওই বিয়ের পর থেকে তার পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনে ঝড় উঠতে শুরু করে। বড় স্ত্রী তার ২ সন্তানকে নিয়ে আজিমপুর সরকারি বাসভবনে বসবাস করছেন। তিনি ছোট স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে চলতি মাসের প্রথম দিকে যশোরে এসে তিনি বাসা ভাড়া নেন। গত ২ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে যশোর আসেন। যশোরে তিনি পলির ভাই আলামিনের কাছে এক লাখ টাকা পেতেন। ওই টাকা দেয়ার কথা বলে তাকে ডেকে এনে পলি ও তার ভাই এবং পলির পুরোনো প্রেমিক রবিন তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

এদিকে ফরিদ আহম্মেদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তার দ্বিতীয় স্ত্রী তামান্না আক্তার পলি জানান, এসএম ফরিদ একজন পেশাদার মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রায় দেড় বছর আগে একটা নাচের অনুষ্ঠানে ফরিদের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম অতঃপর বিয়ে। মতিঝিলের একটা কাজী অফিসে ফরিদ-পলির বিয়ে হয়। বিয়ের পর মিরপুরে একটা বাসা ভাড়া করে তারা স্বামী-স্ত্রী বসবাস করতে থাকেন। এই খবর পেয়ে তার বড় স্ত্রী ও তার ভাইয়েরা অশান্তি শুরু করলে বাসা পাল্টে মতিঝিলের রেল কলোনিতে নতুন বাসা ভাড়া নেন। ওই মতিঝিলের বাসায় ওঠার পর থেকে প্রায় রাতেই বিভিন্ন লোক নিয়ে ফরিদ বাসায় আসতেন। ঘরে বসে মদ ও ইয়াবা সেবন করতেন। কিছু দিন পর হানিমুনের কথা বলে কক্সবাজারে নিয়ে যান পলিকে। সেখান থেকে ফেরার পথে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসেন ফরিদ। পরে সেগুলো পলি ও তার ভাই জিহাদের মাধ্যমে ঢাকায় বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক মাস চলার পর গত এপ্রিল মাসে মতিঝিল থানা পুলিশ ইয়াবাসহ ফরিদকে আটক করে। ওই মামলায় ফরিদ কেরানীগঞ্জ কারাগারে দুই মাস জেলও খাটেন। ওই ঘটনায় এসএম ফরিদকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত কোরবানির ঈদের আগে ফরিদ কারামুক্ত হয়ে ফের পুরোনো ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকায় ভালো ব্যবসা করতে না পেরে গত মাসে ফরিদ যশোরে এসে ঝুমঝুমপুরে বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসা থেকেই গত রাতে এসএম ফরিদ তার স্ত্রী পলি ও তার শ্যালক আলামিনকে আটক করা হয়। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান মিডিয়া কর্মীদের বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদেরকে আটক করেছে। তাদের হেফাজত থেকে ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। আটককৃত এসএম ফরহাদ নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিলে আমরা তার কাছ থেকে একটি পরিচয়পত্র উদ্ধার করে জানতে পারি তিনি আইন বিচার ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। ঘটনাটি জানার পর ওই বিষয়ে আরো তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর