× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ /বার্মিজ সেনাদের নিষ্ঠুরতা অকল্পনীয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রে প্রধান বাধা সেনাবাহিনী

দেশ বিদেশ

মানবজমিন ডেস্ক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার

রাখাইনে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত মাসে তদন্ত প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। গতকাল ওই তদন্তের ৪৪৪ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। এতে রাখাইনে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়। বার্মিজ সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক নাম ‘তাতম্যাডো’ উল্লেখ করে বলা হয়, মিয়ানমারে কোনো প্রতিষ্ঠানই তাতম্যাডো’র ঊর্ধ্বে নয়। দেশটিতে যতদিন সেনাবাহিনী আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে, ততদিন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে শান্তি ফিরবে না। মিয়ানমারের উন্নয়ন ও একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে দেশটির সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় বাধা।
প্রতিবেদনে তদন্তকারী দলের প্রধান মারজুকি দারুসমান রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সংঘটিত নৃশংসতার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে তাতম্যাডোর অভিযানে নিষ্ঠুরতার মাত্রা অকল্পনীয়। রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের আটক করে লিঙ্গের ভিত্তিতে আলাদা করা হয়েছে। পুরুষদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, শিশুদের গুলি করে নদীতে বা জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর নারীদের নিয়মিত গণধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের সময় তাদের অনেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদেরকে মারধর করা হয়েছে। দারুসমান বলেন, সেখানে সংঘটিত নৃশংসতার মাত্রা ও পরিকল্পিত যৌন সহিংসতা থেকে এটা সন্দেহাতীতভাবে বোঝা যায় যে, ধর্ষণকে যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বিবেচনা করে দেখেছি, তাতম্যাডো ও অন্য নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর গণহত্যা জেনোসাইডাল অ্যাক্টস এর ৪/৫টি ক্যাটাগরিতে পড়ে। সবকিছু থেকেই বোঝা যায় যে, সেখানে গণহত্যার উদ্দেশ্যেই অভিযান চালানো হয়েছিল। এর আগে গত মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। একইসঙ্গে গণহত্যার দায়ে সেনাপ্রধানসহ মিয়ানমারের শীর্ষ ৬ সেনাকর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানায় সংস্থাটি। গতকাল প্রকাশ করা পূর্ণ প্রতিবেদনেও একই আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি মিয়ানমারের রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে পুরোপুরিভাবে অপসারণ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। মিয়ানমারের পার্লামেন্টে এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ থাকে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ও দেশটির সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। জাতিসংঘ এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার দাবি তুলেছে। এদিকে, জাতিসংঘের তদন্ত কার্যক্রমে মিয়ানমারের সরকার সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান দারুসমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য এমন সরকার দরকার যা তদন্ত মেনে নেয়। এজন্য এমন একঠি বৈধ কাঠামো দরকার যা বৈষম্যহীনভাবে সবার জন্য এসব গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। এক্ষেত্রে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পালাবদল শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন সে প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বলেছে, দীর্ঘ ১৮ মাসের তদন্ত শেষে তিন সদস্যের এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ৪৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে ৮৫০টিরও বেশি সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সাক্ষাৎকারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা রাখাইনসহ মিয়ানমারের তিনটি রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ভয়ঙ্কর সব বিবরণ তুলে ধরেছেন।
পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্যরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন। তারা গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ জ্যেষ্ঠ ছয় জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর