× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সড়কে বিশৃঙ্খলা কোনো উদ্যোগেই ফল মিলছে না

শেষের পাতা

শুভ্র দেব
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে প্রশাসনের নানা উদ্যোগেও শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়কে। চালকদের গতির প্রতিযোগিতা বন্ধ, একে-অপরের সঙ্গে রেষারেষি, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা, নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামানোর নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না চালকরা। অন্যদিকে যাত্রী ও পথচারিদের আইন অমান্যের প্রতিযোগিতাও থামছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো সড়কে আর কোনো বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামাতে হবে। স্টপেজ ছাড়া বাসের গেট লক থাকবে। লেগুনা-হিউম্যান হলার চলতে দেয়া হবে না।
মোটরসাইকেলের চালক ও পেছনের যাত্রীকে অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেয়া হবে না। এমনকি ট্রাফিক সপ্তাহের সময় বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছিলো।

এরপরে আবার মাসব্যাপী বিশেষ ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। যা চলবে চলতি মাস পুরোটাই। পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির ১৮ দিন পেরিয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসছে না। ট্রাফিকের কর্মকর্তারা শুধু মামলা-জরিমানা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্কাউট, বিএনসিসি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিট। স্পট বাংলামোটর মোড়। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। কারো হাতে স্টপ বা থামুন লেখা প্ল্যাকার্ড। কারো মুখে বাঁশি। আবার কারো হাতে হ্যান্ডমাইক। অন্যদিকে শাহবাগমুখী যানবাহন সিগন্যাল ছাড়ার প্রহর গুনছেন। নারী স্বেচ্ছাসেবকরা তখন জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পায়ে হাঁটা যাত্রীদের পারাপারে ব্যস্ত।

ট্রাফিক পুলিশ যখন শাহবাগমুখী সিগন্যাল ছেড়ে দিলেন ঠিক তখন সিগন্যালের সামনে থাকা মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া গতিতে স্থান ত্যাগ করলেন। তার পেছনে পেছনে লোকাল বাসগুলো একে একে বাংলামোটর পুলিশ বক্সের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো শুরু করে। রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দুর্জয় তখন হ্যান্ড মাইকে বলছিলেন, পুলিশ বক্স ও জেব্রা ক্রসিংয়ের উপরে বাস থামাবেন না। নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামান। কে শুনে কার কথা। বেপরোয়া চালকরা তাদের মতো করেই যাত্রী উঠানামা করছিলেন। আর পেছনে থাকা অন্য যানবাহনগুলো আটকা পড়ে যানজট লেগেছিলো চরম পর্যায়ে।

স্বেচ্ছাসেবক দুর্জয় মানবজমিনকে বলেন, আমি যখন হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেই তখন অনেকে পুলিশ বক্সে বাস না থামিয়ে সামনে গিয়ে থামান। আবার অনেকে মোড়ের মধ্যেই বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করান। আমরা হয়তো সবসময় এখানে থাকবো না। তখন সবকিছু আগের মতোই হয়ে যাবে। নারী স্বেচ্ছাসেবক হীরা আক্তার বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য। কিন্তু মানুষ তাদের মতো করেই চলছে।

শুধু বাংলামোটর নয়, শাহবাগ, রূপসী বাংলামোড়, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, নিউমার্কেট, মিরপুর, মহাখালী, বিমানবন্দর সড়কসহ আরো কিছু সড়কে এমনটাই দেখা যায়। কাওরানবাজার মোড় থেকে ৫০ হাত দূরে মিরপুরগামী বাস থামার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন নির্ধারিত বাস স্টপেজে খুব কম বাস চলতে দেখা গেছে। বিকল্প পরিবহনের চালক আলম জানিয়েছেন, বাস থামার নির্ধারিত স্থানে যাত্রীরা থাকে না। আমি প্রায়ই স্টপেজে গিয়ে বাস থামাই। কিন্তু অন্য বাসের চালকরা মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো শুরু করে। একই স্থানে আনোয়ার হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি আসলে জানি না কোথায় বাস থামাবে। কোনো বাস মোড় থেকেই যাত্রী নিচ্ছে আবার কোনো বাস একটু সামনে গিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে। রিফাত আলম নামের এক চাকরিজীবী বলেন, নিয়ম হলে একই নিয়ম সবার বেলায় কার্যকরী করতে হবে। কোনো বাস মোড়ে থামবে  আবার কেউ স্টপেজে এটা হয় না। এতে করে আমরা যাত্রীরা বিভ্রান্ত হই।

দিনের বেলা যেমন-তেমন রাতের চিত্র আরো খারাপ। দিনের বেলা বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু রাত ৭/৮টার পর তাদেরকে আর দেখা যায় না। আর এই সুযোগেই চালকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এক বাস আরেক বাসের সঙ্গে রেষারেষি, যত্রতত্র পার্কিং, গতির প্রতিযোগিতা ও সিগন্যাল অমান্য করা শুরু হয়। এতে করে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সোমবার রাতে শাহবাগ মোড়ে বিআরটিসি বাসের যাত্রী পারভিন আক্তার বলেন, দুটি বাসই একই প্রতিষ্ঠানের। অথচ তারা নিজেদের মধ্যে রেষারেষি শুরু করেছে। আমি প্রায়ই রাতের বেলা বাসায় ফিরি। তখন দেখি তাদের গতির প্রতিযোগিতা। ইদানীং দিনের বেলা তাদেরকে কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে দেখা যায়। এসময় মোড়ে মোড়ে সার্জেন্টরা থাকেন। কিন্তু রাত হলেই তাদের চেনা রূপের দেখা মেলে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইফতেখার আলম বলেন, আমি মার্কেটিংয়ে কাজ করি। এ জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের অনেক স্থানে গিয়ে কাজ করতে হয়। সড়ক আন্দোলন হওয়ার পরে দিনের বেলা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়। তবে রাত হলেই অন্য চিত্র। তিনি বলেন, সড়কের চিনচেনা এই রূপ বদলাতে আরো সময় লাগবে। আর এজন্য চালকদের মানসিকতার প্রয়োজন আছে।

সড়ক আন্দোলনের পর ট্রাফিক পুলিশ ও বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক ও যানবাহনের সঠিক সকল কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। কিন্তু সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন শত শত গাড়ি ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে চলাচল করছে। এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকরাও গাড়ি চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকার সড়কে আর কোনো লেগুনা-হিউম্যান হলার চলবে না। এমন ঘোষণার পরও ঢাকার অনেক এলাকায় লেগুনা চলছে। লেগুনা চালকরা বলছেন, হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াতে তাদেরকে পথে বসতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না দিলে পরিবার-পরিজনসহ তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সড়কে এখন লেগুনা চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর