× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তদন্ত আলোর মুখ দেখে না

এক্সক্লুসিভ

শুভ্র দেব
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার

গুম হয়, নিখোঁজ হয়। থানায় জিডি হয়। কেউ ফিরে আসে আবার কেউ ফিরে না। কিন্তু এসব ঘটনার তদন্ত কখনই আলোর মুখ দেখে না। যারা ফিরে আসে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হন না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে তেমন কোনো রহস্য উদঘাটন হয় না। ফলে গুম-নিখোঁজের রহস্য বরাবরই অজানা থেকে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে ১৭ জনকে।

তাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন ১৪ জন।
এখনও ফিরেননি ৩ জন। এ তালিকায় রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহম্মেদ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান। যারা ফিরেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক উৎপল দাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বের হোসেন সিজার, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়, ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদসহ আরো অনেকে। তবে ফিরে আসার পর তারা কোথায় ছিলেন, কারা অপহরণ করেছিল, কেন অপহরণ করা হয়েছিল এসব বিষয়ে কোনো কথা বলেন নি।


এ ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী এলিনা খান মানবজমিনকে বলেন, বেশির ভাগ গুম-খুনের বেলায় উল্লেখ করা হয় অজ্ঞাত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। তখন থানা পুলিশ বুঝে যায় কে তুলে নিয়েছে। সেজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে করা জিডির তদন্ত হয় না। তবে এসব বিষয়ে তদন্ত হয়ে একটা রিপোর্ট বের করা দরকার। তাহলে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। তিনি বলেন, আর যারা ফিরে আসে তারা কোনো কথা বলবে না।

কারণ তাদের ছাড়ার সময় থ্রেড করা হয়। এমনকি তাদের পরিবারকে বলে দেয়া হয় কোনো কথা না বলার জন্য।
গত বছরের ২৬শে আগস্ট বন্ধুকে বিদায় দিতে গিয়ে ধানমন্ডি থেকে অপহৃত হন কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ ফাহিম (২০)। এর কয়েক মাস আগে তিনি ছুটিতে ঢাকায় আসেন।

ওইদিন বন্ধুদের নিয়ে বাসার পাশে ধানমন্ডির একটি রেস্তরাঁয় আড্ডাও দেন। রাত ৮টার দিকে বাসায় ফেরার পথে তাকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো  সন্ধান পাওয়া যায়নি। একই বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর বেলজিয়াম ফেরত ছোট মেয়ে সামিহা জামানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এগিয়ে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হোন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। পরে ওই সন্ধ্যায় তিনজন সুঠামদেহী লোক তার ধানমন্ডির বাসায় এসে ল্যাপটপ, সিপিইউ, স্মার্টফোন নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ৫ই ডিসেম্বর দুুপুরে ধানমন্ডি থানায় তার মেয়ে সামিহা জামান একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (যার নং-২১৩)।

ওই দিনই পুলিশ  রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা থেকে মারুফ জামানের ব্যবহৃত গাড়ি উদ্ধার করে। ৮ই আগস্ট পল্লবী থানাধীন মিরপুরের ডিওএইচএস থেকে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা একদল লোক সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল হাসিনুর রহমানকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। গতকাল হাসিনুর রহমানের স্ত্রী শামীমা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, এখনো কোনো সন্ধান মেলেনি। আমরা তার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম তারা এখনও সন্ধান পায়নি। তবে একদিন বাসায় এসে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা কিছু ফাইল নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে নিরাপত্তাকর্মীর মোবাইলে ফোন দিয়ে হাসিনুরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে বলে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছে কয়েকজন লোক।

কিন্তু তারা কোনো কথা বলাতে পারেনি। পরে আবার পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছে। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে ও টাকা পাঠানোর বিকাশ নম্বর পুলিশের কাছে দিয়েছি। কিন্তু কোন অগ্রগতি নাই। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের করা জিডি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও আরো কিছু ক্লু নিয়ে কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট নাই। আর মারুফ জামান ও ইশরাকের নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মানবজমিনকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের খোঁজার জন্য যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ পাইনি।

অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে গুম বা অপহরণ হচ্ছে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তার পেছনে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণ জড়িত। এর মানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের কোনো শ্রদ্ধা নাই। আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। অনেক সময় দেখা যায় মিডিয়ার কল্যাণে পুলিশ এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণ জড়িত থাকার কারণে তদন্তে অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। যখনই তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয় তখন ঘটনার প্রকৃত রহস্য অজানা থেকে যায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক যে কারণই জড়িত থাকুক না কেন পুলিশের দায়িত্ব রহস্য উদঘাটন করা। তা না হলে মানুষের মধ্যে একটা অস্থিরতা, ভয় ও আতঙ্ক কাজ করবে। নিজেকে কোনো কাজে জড়াতে নিরুৎসাহিত করবে। তাই এ বিষয়ে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো মানবিক হতে হবে। পুলিশকে জনগণের আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে হবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা মানবমজমিনকে বলেন, পুলিশ যখনই খবর পায় কেউ গুম বা অপহৃত হয়েছেন তখন সংশ্লিষ্ট পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানা থেকে একটি টিমকে এই রহস্য উদঘাটনের জন্য কাজ করতে বলা হয়। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা কাজ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করলে অনেক সময় থানা পুলিশ জিডি নিতে অনীহা করে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার জানামতে এমন কোনো ঘটনা নাই। আর থানা পুলিশের এ নিয়ে অনাগ্রহ করার কথা না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর