বোরো চাল সংগ্রহের জন্য এবার এমপিদের বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিশেষ বরাদ্দের আওতায় একজন এমপির মনোনীত অটো রাইস মিলারদের কাছ থেকে পঞ্চগড় জেলার খাদ্য গুদামগুলোতে বোরো চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর আগে এ নিয়মে চাল সংগ্রহ করা হয়নি। নির্বাচনী খরচ যোগাতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এমপিদের এ বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে হচ্ছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
আগামী সংসদ নির্বাচনে যাদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ান চূড়ান্ত তাদেরকে চালের বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পঞ্চগড় ১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের একাংশের কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হক প্রধানের এবার নৌকা প্রতীক পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় তাকে চালের বিশেষ বরাদ্দের সুবিধা দেয়া হয়নি। ২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন ৩ হাজার টন চালের বরাদ্দ পেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাস্কিং মিল মালিক সমিতির নেতাসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, প্রতি টনে ২ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে।
সুজন ২ আসনের সংসদ সদস্য হলেও গোটা জেলার ৬টি অটো রাইস মিল মালিককে ডিও লেটারের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত চাল খাদ্য গুদামে সরবরাহের জন্য ভাগ করে দিয়েছেন। তবে হাস্কিং মিল মালিকদের বরাদ্দ না দেয়ার জন্য তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে লেনদেনের বিষয় থাকায় সংশ্লিষ্টরা যে যেভাবে পারছে আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। বরাদ্দকৃত ৩ হাজার টন চালের মধ্যে পঞ্চগড় সদরের তানিম অটো রাইস মিলকে ১০০০ টন, শরীফ অটো রাইস মিলকে ৬০০ টন, বোদার আব্দুল্লাহ অটো রাইস মিলকে ৬০০ টন, দেবীগঞ্জের এসবি অটো রাইস মিলকে ৪০০ টন, আটোয়ারি রাইস মিলকে ২০০ টন ও তেঁতুলিয়া অটো রাইস মিলকে ২০০ টন চাল খাদ্য সরবরাহের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ বছর বোরো চাল সংগ্রহের সাধারণ বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৮১১ টন। ৩৮ টাকা কেজি দরে এ চাল হাস্কিং মিল মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তবে বেশ কিছু হাস্কিং মিল মালিককে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়। আর্থিক সুবিধা নিয়ে বন্ধ মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এমপির বিশেষ বরাদ্দের চাল সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শাহিদুল ইসলাম বলেন, টন প্রতি ২ হাজার করে টাকা নেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। তবে আপনার মতো আমিও শুনেছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চাল সরবরাহ সহ অটো রাইস মিল মালিককে কিছু বললে এমপির ভয় দেখায়। সদর উপজেলা হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, ২ হাজার করে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি।
হাস্কিং মিল মালিকদের চালের বরাদ্দ না দেয়ার জন্য তারা অসন্তুষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বপন কুমার কুণ্ডু বলেন, এমপির মাধ্যমে চাল সংগ্রহ এবারই প্রথম। এটা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। তাই হইতো সরকার এ পদ্ধতিতে চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পঞ্চগড় ২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বরাদ্দকৃত ৩ হাজার টন চাল সংগ্রহের ব্যাপারে অটো রাইস মিল মনোনীত করে ডিও লেটার দেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়ে খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা পাঠান। স্থানীয় কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে নিয়মের মধ্যে থেকে আমরা ওই মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করেছি। অন্যান্য জেলার তুলনায় এ জেলার এমপিকে খুবই কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, অটো রাইস মিলগুলোকে সরাসরি চালের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আমি শুধু মিলারদেরকে সহযোগিতা করেছি। টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আপনি তো আমাকে জানেন, আমি কখনই অবৈধ আর্থিক সুযোগ সুবিধা হাতানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। এ ব্যাপারে কাউকে প্রশ্রয়ও দেইনি।