× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঘণ্টায় দুজন ডেঙ্গু রোগী

শেষের পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার

গত বছরের তুলনায় ঢাকায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৪৩০ জন। মারা গেছেন ১৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫শ’ ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এই মাসে একজন মারা গেছেন। ডেঙ্গু রোগীতে গত ছয় বছরের মধ্যে শুধু ২০১৬ সাল ছাড়া বাকি পাঁচ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে এবার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
তথ্যানুসারে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগস্ট মাসে আক্রান্ত ১৬শ’ ৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, জুলাই মাসে আক্রান্ত ৮৮৭ জন এবং মারা গেছেন ৪ জন, জুন মাসে ২৭৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন।

মে মাসে আক্রান্ত ৩৫ জন, এপ্রিলে ১৫ জন, মার্চে ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন এবং জানুয়ারিতে ২৬ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৭ জন। এর মধ্যে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩৮ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ২০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৫৫ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (মিটফোর্ড) ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগী বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, শীত চলে আসলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কারণ খুঁজতে গিয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জরিপ চালিয়ে দেখতে পেয়েছে, উত্তরে ৬৬ শতাংশ এলাকার ৯৮ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। দক্ষিণে ৬১ শতাংশ এলাকার ৯৩ শতাংশ বাসাবাড়ির একই অবস্থা।

এসব বাসাবাড়িতে এডিস মশার ঘাঁটি অর্থাৎ প্রজননস্তরের লার্ভা-পিউপা পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদ, পানির ট্যাংক, পরিত্যক্ত পরিবহন, টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, বালতি, মগ, ফুলের টব, রঙের কৌটা ইত্যাদি কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার বেশি দেখা যায়। দুই অংশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক এলাকা, বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের এলাকাও ডেঙ্গু বিস্তারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সূত্র জানায়, এই কন্ট্রোল রুমে ঢাকার হাসপাতাল বা সব প্রাইভেট চিকিৎসকদের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীর তথ্য আসে না, সারা দেশ থেকে শুধু ২২ থেকে ২৩টি হাসপাতাল যে তথ্য পাঠায় তা-ই সংরক্ষণ করা হয়। ফলে বেসরকারি পর্যায় থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাস্তবে আরো অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর বলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দিতে হবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ  মানবজমিনকে বলেন, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকে। এবার রোগী একটু বেশি আসছে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে।

সাধারণত ডেঙ্গুজ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেন, সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে  ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।

স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৯ জন। মারা গেছেন ৮ জন। ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬০ জন, মারা গেছেন ১৪ জন। ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৬২ জন, মারা গেছেন ছয়জন। ২০১৪ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭৩ জন। কেউ মরে যাননি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর