পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে পণ্ড হয়ে গেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাও কর্মসূচি। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে জোটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করে ইসি ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে। মিছিলটি মৎস্য ভবন অতিক্রম করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশি বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যায় তারা। পরে শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হয়ে বাংলা মোটর মোড়ে জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।
এ সময় আশেপাশে তেমন কোনো পুলিশের উপস্থিত চোখে পড়েনি। ফলে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েই স্লোগান দিতে থাকে বাম জোটের নেতাকর্মীরা।
বাম জোটের মিছিলটি কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা এলাকায় পৌঁছালে সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আবারও সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পুলিশের হামলায় জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও সিপিবি কেন্দ্রীয় নারী সেলের সদস্য লুনা নূরসহ অর্ধশত নেতাকর্মীর আহত হয়েছেন বলে জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ কাফী রতন। ঘটনাস্থলে জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে যাত্রা শুরু করি। কিন্তু পুলিশ উস্কানিমূলক আমাদের ওপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে না ওঠে, যতদিন সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার ফিরে না পাবে ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
দাবি বাস্তবায়নে আগামী ১১ই অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও এ সময় ঘোষণা করেন তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার সাত্যকি কবিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাছে খবর ছিল, এ মিছিল থেকে কোনো নাশকতা হতে পারে। নিরাপত্তার জন্য তাদের এগোতে দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের গতিরোধ করার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু মিছিল থেকে আগে পুলিশের ওপর হামলা করলে, তারা লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।
এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ চলাকালে গণতান্ত্রিক বাম জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে সরকার তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন মহলের বাধার পরও সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করেছেন। আমাদের তরুণ ছাত্ররা রাস্তায় যা চেয়েছিল, তা বাদ দিয়েই সরকার সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা দেখেছি, নদীর চর দখলের মতো ভোটকেন্দ্র দখলের পরও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনো শাস্তি হয় না। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেই ক্ষমতায় আসুক দেশের মানুষ শান্তি পাবে না। এদের বাদ দিয়ে দেশের মুক্তিকামি দেশপ্রেমিক মানুষকে নিয়ে বিকল্প একটি শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে হবে। যারা মানুষের ভোট ও ভাত দুটোরই নিশ্চয়তা দিতে পারবে।
কর্মসূচিতে আরো অংশ নেন বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ।