রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আছে রেশন কার্ড, কিন্তু পড়ালেখা করে কক্সবাজার ও চট্রগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, এমন রোহিঙ্গা পরিবারের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসের সন্ধানে দেশের বিভিন্নস্থানে পাড়ি জমাচ্ছে প্রতিদিন শ’শ রোহিঙ্গা। চট্রগ্রামের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাষাগত মিল থাকার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে রোহিঙ্গারা। তারা ছেলেমেয়েদের টাকার বিনিময়ে ভর্তি করে দিচ্ছে শহরের স্কুল গুলোতে। উখিয়ার কুতুপালং ডি ৫ এ আশ্রয় নেওয়া আলমরজান তাদেরই একজন। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চট্রগ্রাম গিয়ে গড়ে তুলেছে স্থায়ী আবাস। নাম বদল করে হয়েছে মর্জিনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে পেয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র।
তার ২ মেয়ে আমিরা বেগম, রোজিয়া বেগম ও দুই ছেলে ইসফাতুর রহমান, জিয়াউর রহমানকে ভর্তি করে দিয়েছেন চট্রগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ছেলেমেয়ে গুলো শিক্ষা প্রতিষ্টানে পড়ালেখা করলে এখনো রেশন কার্ডের মাধ্যমে প্রতিমাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রেশন পাচ্ছে। এরকম হাজারো রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। যারা চট্রগ্রাাম, কক্সবাজার-ভাড়া বাসায় অবস্থান করলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে হরদম যাতায়াত। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট থাকলেও স্থানীয় জনগনের বেশে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা সচ্ছল পরিবারগুলো আগেই পাড়ি জমিয়েছে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার সহ দেশের আনাচে কানাচে। মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করা চট্রগ্রামে থাকা আলমরজান ওরপে মর্জিনার দেবর সাইদুর রহমান জানান, তারা মিয়ানমার থেকে একসঙ্গে এসেছিল, তার ভাই আবুবকর, ভাবী আলমরজান সহ ভাইপো ভাইজিরা চট্রগ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করে। তবে কোন স্কুলে সে জানেনা। তারা চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার থাকে। ভাইয়ের এক মেয়ে সমিরা বেগম এখনো কুতুপালং ডি-৫ এ থাকে। তার স্বামীর নাম মৌলভী ইয়াচিন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ভাবীর। এখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নিয়মিত রেশন পাচ্ছে ভাইপো, ভাইজিরা। ক্যাম্পে তারা এখন বেড়াতে আসে। দুই/তিন দিন থাকার পর আবার চলে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুতুপালং ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, মিয়ানমার থেকে আসার পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে, ক্যাম্পের সঙ্গে অনেকের এখনো আসা যাওয়া রয়েছে। মিয়ানমার থেকে যারা টাকা পয়সা নিয়ে আসতে পেরেছে তারা আগেই দেশের বিভিন্নস্থানে পাড়ি জমিয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাওয়ার ব্যাপারে গত মাসের মাসিক উখিয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যপক আলোচনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানা ওসি মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাষাগত মিল থাকায় অনেক সময় রোহিঙ্গারা পার পেয়ে যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবিষ্যতে আরো কঠোর হবে।