টানা দুই ম্যাচে বাজে হার নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় মাশরাফি বাহিনী। দলের থিঙ্ক ট্যাংকের হুটহাট সিদ্ধান্তে অবাক স্বয়ং অধিনায়কও। হঠাৎ সিদ্ধান্তে আরব আমিরাতে উড়িয়ে নেয়া হয়েছে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে। আমিরাতের কঠিন কন্ডিশনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলের স্বাভাবিক খেলা দেখানো কঠিন- এমন মনে করেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে এর উপায়ও বাতলেছেন সাকিব। এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়। আর ম্যাচ সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেন, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্বাভাবিক খেলা কঠিন।
তবে দলীয় শক্তিমত্তার সঙ্গে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খেলতে পারলে আমাদের জয় পাওয়া কঠিন হবে না। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানেরই বিপক্ষে বাজে হার দেখে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার আফগানদের ২৫৫ রানের জবাবে মাত্র ১১৯ রানে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। এ ম্যাচের পোস্ট মর্টেম করার সময় পায়নি টাইগাররা। পরদিনই সুপার ফোর রাউন্ডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।
কিন্তু ফের মলিন মুখে খেলা শেষ করেন মাশরাফিরা। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে গিয়ে মাত্র ১৭৩ রানে অলআউট। শেষে দেখে ৭ উইকেটে হার। ম্যাচ শেষে দলের সঙ্গে দুবাইয়ে থাকা বিসিবি কর্তা আকরাম খান জানান, ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, এ খবর তিনি জানতেন না। টিম ম্যানেজমেন্টের এমন সিদ্ধান্তে বরং তিনি অবাক।
আমিরাতের কঠিন কন্ডিশনে সৌম্য-ইমরুলরা এতো অল্প সময়ে মানিয়ে নিতে পারবেন তো? আর এ দু’জনকে দলে ডাকা হলো কিসের ভিত্তিতে, যেখানে তারা দলেই ছিলেন না। এমন প্রশ্নে মাশরাফি বলেন, তারাও (সৌম্য-ইমরুল) কিন্তু খারাপ খেলেই দল থেকে বাদ পড়েছিল। তারা কেন আসছে, কিভাবে সুযোগ পেলো তা আমি এখনো জানি না। কোনো আলোচনাও হয়নি। তবে ওরাও কিন্তু পারফর্ম না করেই দল থেকে বাদ পড়েছিল। হুট করে এই কন্ডিশনে এই ধরনের টুর্নামেন্টে এসে আবার সেই চাপ নিয়ে কতটা পারবে তাও কিন্তু ভাবনার বিষয়।
আমি জানি না ওরা টেকনিক্যালি কী কাজ করেছে। যে সমস্যার কারণে দলের বাইরে গিয়েছিল, সেগুলো ঠিক করে আসছে কিনা। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আফগানিস্তানের ম্যাচ যদি চিন্তা করেন, আমার মনে হয় তাদের আরো কঠিন বোলার মোকাবিলা করতে হবে। গতকাল প্রসঙ্গটি ওঠে সাকিব আল হাসানের সামনেও। দলে নতুন দুই ওপেনারের অন্তর্ভূক্তি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নে সাকিব বলেন, একটু অস্বাভাবিক। এমন সাধারণত হয় না। তবে দলের প্রয়োজনে যেকোনো পরিস্থিতি নেয়া যেতে পারে। তবে দলের জুনিয়র খেলোয়াড়দের আগলেই রাখলেন সাকিব।
তিনি বলেন, আমরা ওদের (তরুণ) ওপর অল্প সময়ে এতো চাপ দিয়ে ফেলি যে ভালো করার সম্ভাবনা কমে যায়। সিনিয়র যাদের কথা বলছেন অর্থাৎ আমরা চার-পাঁচজন (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ), আমরা কিন্তু কেউ বীর-পালোয়ান ছিলাম না। শুরুর ছয়-সাত বছর আমরাই বা কত ভালো ক্রিকেট খেলেছি? ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানকে পরিষ্কার পেছনে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে দু’দলের ৬ সাক্ষাতে হারজিতে ৩-৩ সমতা। এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল উড়ন্ত।
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬১ রানের পুঁজি নিয়ে ১৩৭ রানের বিশাল জয় কুড়ায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম খেলেন ১৪৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চিত্রটা ছিল ভিন্ন। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর আফগান। তবে টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে ৪০.৫তম ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬০/৫-এ।
কিন্তু সেখান থেকে অবিচ্ছিন্ন ৯৫ রানের জুটি গড়েন আফগানিস্তানের আট ও ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান গুলবদিন নায়েব ও রশিদ খান। এতে ভড়কে যাওয়া মাশরাফি বাহিনী দেখায় সাম্প্রতিক ক্রিকেটে নিজেদের সবচেয়ে বাজে ব্যাটিং। ৪৭ বল বাকি রেখেই গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। আর সুপার ফোর পর্বে বাংলাদেশের দেয়া ১৭৪ রানের টার্গেট ভারতীয়রা টপকে যায় ৮২ বল বাকি রেখে। তবে এখনই আশাহত হতে চান না মাশরাফি। ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা তো এখনো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাইনি। এখনো ফাইনাল খেলা সম্ভব। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কামব্যাক করার সুযোগ আছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে যদি জিততে পারি, পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা ফিফটি-ফিফটি হয়ে যাবে। শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের কারণে আফগানিস্তানকে হারানো কঠিন। তবে আমরা যদি ২৬০-২৭০ রান করতে পারি তাহলে অবশ্যই তাদের হারাতে পারবো।’ চোটগ্রস্ত তামিম ইকবালের জায়গায় সুযোগ নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তরুণ ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই ম্যাচেই ব্যক্তিগত ৭ রানে উইকেট খোয়ান বাঁ-হাতি এ ওপেনার।
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে মাত্র ২ রান করলেও বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান তামিমের। ব্যক্তিগত ২ রানে সাজঘরে ফেরেন রিটায়ার্ড হার্ট তামিম। আর দলের নবম উইকেটের পতনে হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ক্রিজে যান এ ড্যাশিং ওপেনার। শেষ উইকেট জুটিতে ৩২ রান করেন তামিম-মুশফিক। যদিও জুটিতে এক বলই মোকাবিলা করেন তামিম। আর তামিম ওই বল খেলেন এক হাতে।
ওয়ানডেতে তামিমহীন বাংলাদেশ দেখলো টানা ১১ ম্যাচে হার। ২০১৪’র ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এমন ১১ হারের দুটিই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এর আগে ২০১৪’র ১লা মার্চ ফতুল্লায় আফগানদের কাছে হার দেখে তামিমহীন বাংলাদেশ। ২০১৪’র ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ই মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ তামিমকে ছাড়া খেলে ৭ ওয়ানডে। আর ২০১৭ ও ২০১৮‘তে তামিমকে ছাড়া দুটি করে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। এই ১১ ম্যাচেই হারের স্মৃতি টাইগারদের।