× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে বিএনপি’র ১১৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, ঘরছাড়া দুই শতাধিক

বাংলারজমিন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৩২৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ১১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর পুলিশের ভয়ে ঘরছাড়া রয়েছে বাকি দুই শতাধিক নেতাকর্মী। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর সাতটি থানায় সাতটি গায়েবি মামলা করা হয়েছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা মাঠের সক্রিয় কর্মী। যাদের বিরুদ্ধে আগে তেমন কোনো মামলা হয়নি। আবার আগের মামলায় যারা সাজা খেটে বেরিয়েছেন বা জামিনে আছেন এমন নেতাকর্মীদেরও এই গায়েবি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
যাতে তারা মাঠ পর্যায়ে নেমে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারে। আর মাঠে নামলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে। এমনকি রাতে বাসাবাড়িতে হানা দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পুলিশের ভয়ে নেতাকর্মীরা এখন ঘরছাড়া। তিনি বলেন, এসব মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা নিজেরাই ঘটনা সম্পর্কে জানে না। প্রতিটি মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে-বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে দাঁড় করানোর হীন উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকিয়া বর্তমান সরকারকে উৎখাত, আসন্ন নির্বাচন বানচাল ও অবৈধভাবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বাহির, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরোধিতার নিমিত্তে সমবেত হইয়াছে। এই খবর পেয়ে পুলিশ যাচ্ছে এবং তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। সেই মামলায় নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। বাস্তবে এই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটছে না। তিনি জানান, গত ১৭ই সেপ্টেম্বর নগরীর খুলশী থানায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুস সাত্তারসহ ৪৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে ওইদিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করেছেন তিনি। অথচ তিনি একজন আইনজীবী। বিএনপির শাসনামলে দু’দফায় প্রায় ১১ বছর পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি। আবদুস সাত্তার এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমার মতো ৬০ বছরের কাছাকাছি বয়সের একজন মানুষ ভোর সাড়ে ৪টায় উঠে পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি বলতো-আমি ককটেল হামলার নির্দেশ দিয়েছি সেটাও তো বিশ্বাসযোগ্য হতো কারও কারও কাছে। এখন মামলায় আমি ঘর তো ছেড়েছি। কোর্টেও যেতে পারছি না। একই কথা বলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, পুলিশ তল্লাশির নামে রাতের আঁধারে আমার বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছে। অথচ তখন হজের উদ্দেশ্যে আমি সৌদি আরব ছিলাম। ওইদিন ভোরে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার মিথ্যা মামলা হয়েছে আমার নামে।
গায়েবি মামলা দিয়ে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম ও নগর বিএনপি নেতা ইয়াকুব চৌধুরীসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। আর এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে মহানগর যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আজম উদ্দিন, চান্দগাঁও ওয়ার্ড যুবদল নেতা মনসুর ও রাসেল আবদুস সাত্তার সেলিম, আবু মুসা, আজিজুর রহমান বাবুল, শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া আপেল, জোনাব আলীসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে। সূত্রমতে, গত ১৪ই সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নম্বর ১৯। মামলার প্রধান আসামি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওয়ার্ড যুবদল নেতা মনছুর আলম ও রাশেদকে। ১৭ই সেপ্টেম্বর নগরীর পাহাড়তলী থানায় নগর বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙালিসহ ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। এতে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে। এছাড়া নগরীর হালিশহর থানায় গত ১৭ই সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় নগর বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নগরীর বন্দর থানায় গত ১১ই সেপ্টেম্বর সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। যুবদল নেতা এরশাদকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা থানায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ৭৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় ৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নগরীর আকবর শাহ থানায় গত ৭ই সেপ্টেম্বর ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আবদুস ছাত্তার সেলিমসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নগরীর ডবলমুরিং থানার একটি পুরনো মামলায় সম্প্রতি নগর বিএনপির চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন- নুরুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুব আলম ও মো. ইদ্রিছ। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানায় দায়ের হওয়া একটি পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নগর বিএনপির প্রশিক্ষণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী, সহ-শ্রম সম্পাদক আবু মুছা, ও জোনাব আলীকে। বিএনপির গায়েবি মামলার অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে রাজিও নন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। সুনির্দিষ্ট ঘটনায় মামলা হচ্ছে। যেসব থানায় মামলা হয়েছে সেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও এসব মামলার বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, পুলিশের ওপর ককটেল হামলা করলে, গাড়ি ভাঙচুর করলে সেটা তো মিডিয়ায় আসতো। এখন যেসব মামলা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা হচ্ছে, একটি ঘটনাও মিডিয়ায় আসেনি। প্রচলিত আইন ভঙ্গ করলে মামলা হোক কিন্তু গায়েবি মামলা কীভাবে মেনে নেয়া যায়? তবে আমরা এসব মামলাকে ভয় করি না। সাময়িক কৌশল হিসেবে আমরা আপাতত বাসাবাড়িতে থাকছি না। বিভিন্ন জায়গায় সরে আছি। তিনি বলেন, এর আগেও গত ৮ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা নিয়েও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি গায়েবি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা, খুলশী, ইপিজেড ও বন্দর থানায় গত ৫-৭ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচটি মামলা হয়। এতে বিএনপির ১২৪ নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর