দেশের ভেতর চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। সোমবার সংগঠনটির উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক: দায় ও দায়িত্ব’- শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেন, সরকারের যেকোনো বিশেষ পদক্ষেপের সমালোচনা করলেই সেটিকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এই ধরনের আচরণ থেকে ভিন্ন মতের রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গবেষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, কলামিস্ট কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বক্তারা এ সময় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা বিনা বিচারে নানা অজুহাতে হত্যাকাণ্ড, দীর্ঘদিন ধরে চলমান গুম-খুনের প্রকোপ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নানামুখী আক্রমণের ঘটনায় সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক ও জনমুখী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি নাগরিক গণতদন্ত কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে অবিলম্বে প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ রাজনৈতিক কারণে হয়রানিমূলক মামলায় আটককৃত সকলের মুক্তি দাবি করেন। সংলাপে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আমরা আজকে উদ্বিগ্ন এই কারণে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নাম করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারা, দায়িত্ব নিয়ে সেটা পারছেন না। সেজন্য আমাদের আরো বড় করে উদ্বেগটা প্রকাশ করতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, তাদেরকে আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে তারা অঙ্গীকার করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
আরেকটা বিষয় দেখতে পাচ্ছি যে শহিদুল আলমকে ধরে নিলো, তার স্ত্রী এতেই সন্তুষ্ট যে সে কারাগারে আছে। এই বাচ্চাগুলোকে ধরে নিলো, অনেকদিন ধরে তাদের কোনো খবর নেই। অমানবিক, নিষ্ঠুর যন্ত্রণার মধ্যে অভিভাবকরা যখন দেখলেন বাচ্চাগুলো ডিবি অফিসে আছে, সেই অভিভাবকরা এতেই সন্তুষ্ট হয়ে বলছেন তারা ডিবি অফিসে আছেন, তাদের মেরে ফেলা হয়নি। একটা জাতি যখন শুধু প্রাণে বেঁচে আছে, এটুকুতেই সন্তোষ প্রকাশ করে সেই জাতির অবস্থান কোথায় গেছে? সেই জাতি কোথায় দাঁড়িয়েছে? এসব দেখলে আমার মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা মনে পড়ে। শহিদুল আলমের সহধর্মিণী ও শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, এদেশের একজন লোককে হাত বেঁধে, চোখ বেঁধে নিয়ে যেয়ে আমাদের সাহসী বাহিনীর জোয়ানরা খুশি হন। আমি শুনেছি যে চারটি বাহিনীর জোয়ান এই অভিযানে ছিলেন। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় তো তারা এই ট্রেনিংগুলো পান। যখন অন্য প্রশ্ন ওঠে তখন এটার সঙ্গে এই ট্রেনিংয়ের বিষয়টিও তোলা উচিত। আরেকটি বিষয় জানতে পেরেছি আমাদের দেশে নাকি ইসরাইল থেকে থার্ড পার্টির মাধ্যমে সফটওয়্যার আমদানি করা হচ্ছে যার মাধ্যমে একটি সর্বগ্রাসী সার্ভেইলেন্স ব্যবস্থা চালু করা হবে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমাদের দেশে সামপ্রতিক আইন এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে রাষ্ট্র এবং নাগরিক বিরোধী একটা জিনিস তৈরি হয়ে গেছে। সরকারের মন মানসিকতা এ রকম যে, নাগরিককে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করতে হবে। সমপ্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা হলো অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট। এটা মূলত অনেক আগে থেকেই অকার্যকর ছিল। এর মধ্য দিয়ে সরকার আমাদের একটা বার্তা দিতে চায়। সুস্থ মানুষের পক্ষে এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষে এই আইন করা সম্ভব না। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরের সঞ্চালনায় এবং অজয় রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ছাত্রনেতা বাকী বিল্লাহ, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।