× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যে গল্প যায় না বলা (পর্ব- ২) /বিমানবন্দরে আত্মহত্যার চেষ্টা করা রুনা বললেন আমি মরতে চাই

প্রথম পাতা


২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার

এটা শুধু একদল নারীর স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প নয়। বরং তাদের নিয়তি আর জীবন কীভাবে তছনছ হয়ে গেছে এটা সে গল্প। ওরা স্বপ্ন দেখেছিল। বর্ণনা করা যায় না, বলা যায় না, লেখা যায় না। অসহ্য আর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে  ফিরছে ওরা। বিমানবন্দরে নেমেই ভেঙে পড়ছে কান্নায়। কেউবা লজ্জায় মুখ ঢাকছে। কেউবা করছে আত্মহত্যার চেষ্টা।
সৌদি ফেরত নারীদের জীবনের অবর্ণনীয় পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন আমাদের স্টাফ রিপোর্টার মরিয়ম চম্পা।

রুনা লায়লাকে নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। এই তো সেদিনের কথা। সৌদি থেকে ফিরে গত ২৮শে আগস্ট দুপুর ২টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় তলার মহিলা টয়লেটে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এসময় একটি চিরকুটে লোকমানসহ আরো চার ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঠিক সময় উপস্থিত না হলে আজ হয়তো রুনা ওপারের বাসিন্দা হতেন। এখনো যে হতে চান না তা নয়। সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় ঘটাতে পারেন বড় কোনো দুর্ঘটনা। তার বাড়ি দিনাজপুরের ফারাক্কাবাদ, মিরগাঁও বিরল গ্রামে। পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা তাকে এখন গৃহবন্দি করে রেখেছে। নাওয়া-খাওয়া নেই। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে খুব একটা কথা বলেন না। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। এই হাসেন, এই কাঁদেন। রুনার বয়স কাগজে কলমে ২৬ বছর। আর দশটা পড়ুয়া মেয়ের মতো কলেজের গণ্ডিতে পা রেখেছিলেন। দিনাজপুরের মহিলা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয়বর্ষে পড়তেন রুনা।

৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় দুই বোন শ্বশুরবাড়ি। শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও বুকের হাড় ক্ষয় হয়ে দুই বছর আগে মারা যান বাবা আজহার আলী। তিনি দিনাজপুরে নাইটগার্ডের চাকরি করতেন। সৌদিতে থাকায় বাবার মুখটা শেষবারের মতো দেখতে পারেননি রুনা। মা জমিলা খাতুনও বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি স্ট্রোক করেছেন।
রুনার এক বান্ধবী তাকে সৌদি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। শুরুতে রাজি হননি। একসময় সংসারের অভাব-অনটন দূর করার কথা চিন্তা করে সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রুনা। ২০১৬ সালের ২রা মার্চ ফকিরাপুলের পানির ট্যাংকির কাছে হাজী ফারুক ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি যান। সেখানে গিয়ে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হন। কফিল ভালো না হওয়ায় পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন দূতাবাসের মক্তবে। সেখানে এসে তছনছ হয়ে যায় তার জীবন। রুনা বর্তমানে তার বড় বোনের বাসায় গাজীপুরের জিরানিতে আছেন। অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘আর বলিয়েন না, আমি অনেক বেশি অসুস্থ। ওরা আমাকে পাহারা দিচ্ছে কেন বুঝতেছি না। আপা-দুলাভাই আমাকে পাহারা দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে জানি না। আমি কী ফকিন্নি না চোর। আল্লাহই জানে। আপনার সঙ্গে সব শেয়ার করবো। ডোন্ট মাইন্ড। এভাবেই ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলেন সৌদি ফেরত নারী রুনা। তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে শেয়ার করলে ভয় পাবেন না তো। আচ্ছা আমি মরবো আপনেও কি মরবেন। যখন আমি খাবো তখন আপনেও কি খাবেন। আচ্ছা আচ্ছা ইনশাআল্লাহ। যেহেতু একটা সাথী পেলাম। এখন আর পরপারে একা যাবো না। সঙ্গে একজন সাথী যাবে।’

ধন্যবাদ খুশি হলাম। তা দুপুরে খেয়েছেন। আমি খাইনি। খেলেই গলা জ্বলে। পরিমাণে তো (কীটনাশক) একটু বেশি খেয়েছিলাম। তাই ওরা খুব মোটা পাইপ দিয়ে আমার গলায় ওয়াশ করেছে।

আমি ডাক্তার দেখাবো না। আমি তো চাই যেনো ধুঁকে ধুঁকে মরে যাই। আমি মরতে চাই। জানেন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সবাই যা করে আমি তা করবো না। আমি এখন বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছি। হঠাৎ কান্নাভেজা কণ্ঠে...আপনে কি মজা নিচ্ছেন আমার সঙ্গে। সবাই মজা নিচ্ছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষের কথা শুনে খুব বাঁচতে ইচ্ছা করে। বিধাতা মনে হয় এই পৃথিবীতে আমাকে রাখবে না। জানেন একটা কলম যখন কালিশূন্য হয়ে যায় তখন বাইরে থেকে অনেকেই ভাবে আহা কলমটি দেখতে কতোই না সুন্দর। কিন্তু যখন ব্যবহার করবে তখন দেখবে কলমে কালি নেই। ঠিক আমিও ওরকম একজন মানুষ। যার কলম আছে কিন্তু কালি নেই। সব কথা শেয়ার করে আমি যেহেতু মরছি। তাই আর কিছু শেয়ার করতে চাই না। কোনো এক সময় শুনবেন রুনা ‘সি ইজ ডেথ’। রুনা আর থাকবে না। আমি তো কাউকে আশা দিয়ে নিরাশ করিনি। কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। সবাই আমাকে পাহারা দিয়ে রাখছে। কোনো কিছুই করতে পারছি না। একবার পার্টি দিয়েছিলাম এয়ারপোর্টের তিন তলার বাথরুমে এবার পার্টি দেবো আজিমপুর গোরস্থানে। আমার না কিছুই ভালো লাগছে না। বিলিভ মি আসলে কি বলবো। আমি কখনো জানতাম না আমার জীবনটা এমন এলোমেলো ছন্নছাড়া হয়ে যাবে।

আবার কান্না...। আপনে কে। আপনার নাম কি। জানেন আমার নামটাও খুব সুন্দর। কিন্তু ভাগ্যটা না খুবই খারাপ। আমি আর পারছি না। আমার আর কোনো কথা নেই। সব কথা ফুরিয়ে গেছে। আমার ভাগ্যই খারাপ। শোনেন আমি একজন রানিং স্টুডেন্ট ছিলাম। বান্ধবীর কথায় অনেক কষ্টের পর সৌদি গেলাম। আমার দুঃখের কথা শুনলে বনের পশু-পাখি, গাছপালাও কাঁদবে। সৌদির কফিল ভালো না হওয়ায় দূতাবাসে চলে আসি। সেখানে লোকমান আমাকে ফাঁদে ফেলে। হঠাৎ ও আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো। হায়রে লোকমান। আহারে লোকমান। ওর চেহারা দেখলে নিষ্পাপ শিশুর মতো মনে হয়। কিন্তু ভেতরে এত জংলি-জানোয়ার, এত খারাপ জানা ছিল না। বাসার সবাই পাগল হয়ে গেছে। আমাকে হাসপাতালে নিতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। এখন বাসায় ডাক্তার ডেকেছে। আসুক না ডাক্তার...গায়ে পানি ঢেলে দেবো। বাপ বাপ করে পালাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর