× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘ভাইরাল’-এ আক্রান্ত সংগীতাঙ্গন

বিনোদন

ফয়সাল রাব্বিকীন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার

‘ভাইয়া, আমার আর কিছু চাই না। আমাকে একটা ভাইরাল গান করে দিতে হবে’- এমনই আবদার নিয়ে সম্প্রতি একজন নবাগত শিল্পী হাজির হয়েছিলেন সংগীত পরিচালক সজীব দাশের স্টুডিওতে। তিনি এমন আবদার শুনে হতবাক হয়েছেন, হয়েছেন বাকরুদ্ধ। কিন্তু অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে এমন ‘ভাইরাল’- এ আক্রান্ত এখন সংগীতাঙ্গন। একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পড়তে যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনই সেটাকে ভাইরাল বলা হয়। এটা যেমন গানের ক্ষেত্রে হতে পারে তেমনি হতে পারে কোনো ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রেও। কোনো ইতিবাচক বিষয়ও হতে পারে, হতে পারে নেতিবাচক বিষয়ও। তবে ‘ভাইরাল’ শব্দটি কোনোভাবেই শৈল্পিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবের কল্যাণে সংগীতাঙ্গন চলছে ‘ভাইরাল’-এর পথে। কিন্তু বোদ্ধারা এটিকে সংগীতাঙ্গনের জন্য বিষফোঁড়া হিসেবে অভিহিত করেছেন। ভাইরাল বিষয়টি আমাদের দেশে ভালোভাবে পরিচিতি পেয়েছে দু’বছরের মতো হবে। তবে চলতি বছর এসে এটি মাথা মগজে বসে গেছে যেন সবার। বিশেষ করে আরমান আলিফের ‘অপরাধী’ গানটি ভাইরাল হতে হতে দশ কোটি ভিউ অতিক্রম করেছে ইউটিউবে। বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছেন প্রথম অনেকেই। কিন্তু অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন গানটির মান নিয়েও। আরমান আলিফের এই গান ভাইরাল হওয়ার পর তিনি যেন ভাইরাল হওয়ার নেশায় মেতেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকাশ করেন ‘নেশা’, ‘বেঈমান’, ‘কার বুকেতে থাকো’ গানগুলো। কোম্পানির চাপে এবং আরমানের ইচ্ছায় এ গানগুলোর সুর ‘অপরাধী’র সুরের একদমই কাছাকাছি ধরনের। গান ভাইরাল করবার জন্য কোম্পানিগুলোও এসব গানের প্রচারও করছে দেদার। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মাহতিম সাকিব ও টুম্পা খানের কাভার করা গানও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। যার ফলে এ দু’জনও উঠে আসেন আলোচনায়। এরইমধ্যে মাহতিম ও টুম্পা খানের কদরও হঠাৎ বেড়ে যায় অডিও কোম্পানিগুলোর কাছে। সেদিক থেকে মূলধারার শিল্পীদের পাশ কাটিয়ে আরমান, মাহতিম, টুম্পা খানদের গান করার জন্য এখন বুঁদ হয়ে রয়েছে বেশির ভাগ কোম্পানি, শুধুমাত্র ভাইরালের প্রত্যাশায়। ভাইরাল হলেই ভিউ বাড়বে হু হু করে। আর সেটা হলেই ইউটিউব থেকে আয়টাও বাড়বে। কিন্তু এমন ‘ভাইরাল’ প্রতিযোগিতায় ভালো মানের গানগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। চাপা পড়ে যাচ্ছে মূলধারার শিল্পীরা, যারা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এখন পর্যন্ত এসেছেন। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেন, ভাইরাল বিষয়টিতে আমি বিশ্বাসী না। এমনকি ভিউর প্রতিযোগিতারও বিপক্ষে আমি। ভালো গান হলে মানুষ এমনিতেই শুনবে। তবে এটা ঠিক যে ভাইরালের পেছনে ছুটছেন অনেকেই। এটা হওয়া উচিত নয়। গান করার আগেই যদি ভাইরাল হওয়ার প্রত্যাশা থাকে তবে সেটা গান হবে না, হবে শুধুমাত্র পণ্য। তাই আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বলবো সবাইকে। এমআইবি সভাপতি ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজারভিশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, আমরা হুজুগে বাঙালি। এটা বার বার প্রমাণ করেছি। তবে আমরা যেহেতু গানের জগতের মানুষ তাই অবশ্যই ভালো গানকে প্রমোট করার দায়িত্ব আমাদের। সেদিক থেকে ‘ভাইরাল’ বিষয়টির একদমই বিপক্ষে আমি। ভাইরাল হলেই সে ধরনের গান কিংবা সেই শিল্পীর গান আমার করতে হবে তাতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি চাই ভালো মানের গান করতে। ভালো শিল্পীদের প্রমোট করতে। এটাই প্রত্যেক সংগীত সংশ্লিষ্টের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। চলতি প্রজন্মের শিল্পী কাজী শুভ বলেন, ভাইরাল হলেই ভিউ বাড়ে। আর ভিউ দিয়ে যদি একজন শিল্পীকে মূল্যায়ন করা হয় তবে সেটা খুবই দুঃখজনক। কারণ, অনেক কষ্ট করে একজন শিল্পী নিজের জায়গা তৈরি করেন। শুধুমাত্র ভিউ দিয়ে তার মূল্যায়ন সম্ভব নয় এটা সবাই জানে। কিন্তু তারপরও কেন আমরা ‘ভাইরাল’ রোগে আক্রান্ত সেটা বুঝি না। সংগীত পরিচালক সজীব দাশ ছোট করে বলেন, আগে ভাই ‘হিট’ গানের আবদার করতে শুনেছি অনেক শিল্পীকে। তখনও বিরক্ত লাগতো। আর এখন শুনি ‘ভাইরাল’ গান করে দেয়ার আবদার। বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। এটা যে একজন সংগীত পরিচালকের জন্য কত বড় কষ্টের বিষয় সেটা বলে বোঝানো যাবে না। খুব শিগগিরই ‘ভাইরাল’ বিষয়টি থেকে বের না হতে পারলে সংগীতাঙ্গন হুমকির মুখে পড়বে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর