বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সামনে এগিয়ে নিতে আগামী শনিবার বিএনপির সমাবেশের পর লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে পর্যবেক্ষক হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের আ অ ম শফিক উল্লাহ, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। বৈঠক শেষে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মূলত ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের বৈঠক ছিল।
ড. কামাল হোসেন অসুস্থ, তাই তিনি আসতে পারেননি। বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির প্রতিনিধি জানালেন, ২৯শে সেপ্টেম্বর তারা ঢাকায় সভা করবে। এ সভা থেকে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে একটি ঘোষণা আসবে। তাই এ দিনের পর বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের অনুরোধ করেছেন।
আমরা এতে সম্মত হয়েছি। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ভারসাম্যের রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছাড়া সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য কামনা করি। ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়ার বিষয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, শনিবারের জনসভায় ঐক্যের বিষয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরবো। পরে ঐক্য প্রক্রিয়া সফলভাবে এগিয়ে নিতে আমরা চেষ্টা করবো। জামায়াতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম আবদুর রব বলেন, এখানে জামায়াত কোনো বিষয় না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জামায়াত কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে? না করলে তাদের সামনে আনা হচ্ছে কেন? আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান স্বৈর শাসকদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের বিষয়ে সরকারের কি অবস্থান তা গত কয়েক দিনের প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের ঘোষণায় স্পষ্ট বলা আছে, স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তির সংগঠনকে আমরা ঐক্যে আনছি না। এটিই আমাদের অবস্থান। ৩০শে সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে সমাবেশ করার কথাও জানান মান্না। তিনি বলেন, আমরা নয়-ছয় করে ঐক্য করতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে নিশ্চিত সামনে এগিয়ে যাব। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এদিকে বৈঠকের আগে নিজ বাসায় ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি সভা করেন বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরী। পরে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের ব্রিফিং শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের একটি প্রেস রিলিজ পড়ে শোনান এবং তা বিতরণ করেন।
এতে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ঐক্য হতে পারে না।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল বা ব্যক্তিকে শরিক রাখলে বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না। স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মঞ্চে স্থান পেতে পারে না। এজন্য জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে না বসার আহ্বান জানাচ্ছি।