প্রখ্যাত মার্কিন কমেডিয়ান বিল কসবি ৩ থেকে ১০ বছরের সাজা পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার এক আদালত তাকে এই সাজা দিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ৮১ বছর বয়সী কসবিকে ‘সহিংস যৌন শিকারী’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাকে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং করে যেতে হবে। পাশাপাশি, যৌন অপরাধীদের তালিকার মধ্যে তার নাম থাকবে।
সাজার পর কোনো বিবৃতি দিতে চান নি বিল কসবি। এপ্রিলে পুনঃবিচারের পর কসবিকে ৩টি যৌন নির্যাতনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ২০০৪ সালে আন্দ্রিয়া কনস্ট্যান্ডকে জোর করে চেপে ধরা ও নিপীড়ন করার অভিযোগে তার বিচার শুরু হয়। মামলায় আপিল করা পর্যন্ত জামিন চেয়েছিলেন কসবি।
কিন্তু আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আশির দশকে ‘কসবি শো’ টিভিতে অভিনয়ের সুবাদে আমেরিকার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে কমেডিয়ান বিল কসবির নাম। সেখানে তিনি নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসরত সচ্ছল কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে পিতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার জনপ্রিয়তা এত ছিল যে তাকে বলা হতো ‘আমেরিকার পিতা।’
সিএনএন জানিয়েছে, মন্টগোমারি কাউন্টি কোর্টহাউজে সাজার রায় ঘোষণা করেন বিচারক স্টিভেন ও’ নেইল। তিনি বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর অপরাধ।’
গত বছরের জুনে টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক আন্দ্রিয়া কন্সট্যান্ড এই অভিযোগ আনেন। তিনি বর্ণনা করেন, কসবিকে তিনি নিজের মেন্টর ভাবতেন। একদিন কসবি তাকে বিশেষ এক ধরণের পিল খাওয়ান। যার দরুন তিনি অসাড় হয়ে পড়েন। ফলশ্রুতিতে তাকে ধর্ষণ করেন কসবি। কিন্তু শরীর অসাড় হয়ে যাওয়ায় কিছুতেই ওই আক্রমণ ঠেকানোর শক্তি তার ছিল না।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার প্রভাব আমার জীবনের ওপর কীভাবে পড়েছে তা সত্যিকার অর্থে বুঝতে হলে, আপনাকে আগে বুঝতে হবে যে আগে আমি কি ধরণের মানুষ ছিলাম। আমি আমার কর্মজীবনে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম যে আমার পড়াশুনা ও শরীরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবনের যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে তা সামনের যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখে আমাকে অটুট রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘অথচ, হামলার পর আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আমার কি হয়েছে। অথচ যন্ত্রণা ছিল তীব্র। লজ্জা ছিল অপরিসীম। কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে আমি সাধারণত পরিবার ও বন্ধুদের কাছে যেতাম। কিন্তু দ্বিধা আর নিজের ওপর সংশয়ের কারণে তা-ও করতে পারছিলাম না। আমি সম্পূর্ণ একা বোধ করতে লাগলাম। কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিজেকেও না।’ তিনি আরও লিখেন, ওই ঘটনার পর তিনি খাওয়া, ঘুমানো ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছেড়েই দিয়েছিলেন। রাতে দুঃস্বপ্নে জেগে উঠতেন। অবশেষে এক পর্যায়ে তিনি তার মাকে ঘটনা খুলে বলেন।
তার ভাষ্য, ‘বিল কসবি আমার সুন্দর, স্বাস্থ্যবান তারুণ্যদীপ্ত উদ্দীপনা কেড়ে নিয়েছেন। মাটিতে পিষে ফেলেছেন। তিনি আমার স্বাস্থ্য, জীবনীশক্তি, মুক্ত মন এবং নিজের ও মানুষের প্রতি বিশ্বাস কেড়ে নিয়েছেন।’
মন্টগোমারি কাউন্ট্রি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কেভিন স্টিল তার প্রতি সহানুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘কনস্ট্যান্ড আছেন বলেই আমাদের সবার জীবনই আরেকটু ভালো আছি।’ তিনি আরও বলেন, নিজেকে এভাবে আবদ্ধ রাখা বছরের পর বছর, এরপর বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের নজরে এসে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা ভীষণ কঠিন কাজ। তিনি চাইলেই নীরবে নিভৃতে বসবাস করে যেতে পারতেন। তবে তিনি জানতেন যে, বিচার হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।