প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা এবং এগিয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চশিক্ষা যাতে সর্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।’
শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে আয়োজিত দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মাহামন্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভীতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কোন স্থান থাকবে না।
ছাত্র রাজনীতি নেতৃত্ব থাকবে ছাত্রদের হতে লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোন জায়গা থাকবে না।
সমাবর্তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (এমপি) বলেছেন, ‘উচ্চ ডিগ্রি অর্জন শেষে আপনারা এখন নতুন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছেন। সামনে আপনাদের উজ্জল ভবিষ্যত। আপনাদের এই পর্যায়ে আসার জন্য এদেশের জনগণের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তাই আপনাদেরও তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ সময় গ্রাজুয়েটদের জনগণের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিবেশ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে না এমন দাবি করি না। শিক্ষকদের পাঠদানে অবহেলা, যথাসময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে না পারা কিংবা পক্ষপাতমূলক ও অবাঞ্ছিত আচরণের অভিযোগ শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিবেদন ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রদের দলীয় রাজনীতির অকল্যাণকর প্রভাব, সেশনজট সংস্কৃতির কারণে শিক্ষা জগতে নৈরাজ্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে ও চিন্তায় স্বচ্ছতায় ও জবাবদিহিতার অভাব উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের বাধা বলে চিহ্নিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি হয়নি, পরীক্ষা পদ্ধতিও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অবস্থা এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক অন্যের মূল্যায়নের উপর আস্থা রাখতে চায় না।’
এর আগে ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
লিখিত বক্তব্য শেষে করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেখেন খুব তাড়াতাড়ি পড়ছি। তাড়াতাড়ি পড়ার কারণ হইলো আর বেশি দেরি করলে এই হেলিকপ্টারে আজ যাইতে পারব না। পাঁচদিন ঘুইরা আইছি হাওর এলাকায়, দুর্গম এলাকায়, অনুন্নত এলাকায়। রাজশাহীতো অনেক উন্নত এলাকা। তবে এখানে গরম অনেক বেশি। আজকে আপনারা যেভাবে হাতের ব্যায়াম (বাতাস) করতাছেন এই ব্যায়াম দেইখা বেশি কথা বলার সাহস আমার নাই।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার ছোট বেলার স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, আমি যখন ক্লাশ এইট থেকে নাইনে উঠি রেজাল্ট খারাপ হইছে দেখে আমার বাপ আমারে গালাগাল করছিল, তখন রাগ কইরা আমি আমার এক ফেন্ডরে লইয়া সারা বাংলাদেশ উইথআউট টিকিট ট্রেনে ঘুরছি। রাজশাহীও আমি আসছি। টমটমে রাজশাহী শহর ঘুইরা দু’দিন থাইকা গেছি।