ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকে কেন্দ্র করে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় উভয় সংকটে পড়েছেন সুন্দরবনের জেলেরা। এ সময় সরকার ভর্তুকি দিলেও তারা সেটি পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, সুন্দরবনে ইলিশ বাদে অন্য মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। এদিকে, হঠাৎ প্রজ্ঞাপন জারি করায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার জেলে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ৭ থেকে ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত সাগর ও নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদ-নদীতেও সাধারণ মৎস্য আহরণও নিষিদ্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি হলেও সেটি বন বিভাগের দপ্তরে পৌঁছেছে ৫ই অক্টোবর। এর আগেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মৎস্য আহরণের জন্য অধিকাংশ জেলেদের পারমিট দিয়েছে বন বিভাগ।
পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেও জেলেরা পড়েছেন বিপাকে। কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দিচ্ছেন। জাল ও নৌকা জব্দ করা হচ্ছে। এতে সর্বস্ব হারিয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন জেলেরা।
এদিকে, মৎস্য অধিদপ্তর এবং বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার জন্য ইলিশের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। অন্যদিকে, ওই ক্ষতিপূরণ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল অন্য জেলেদের ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে না। এসব জেলে উভয় দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব জেলেদের দাবি, সরকার হয় ক্ষতিপূরণ দিক অন্যথায় তাদেরকে মাছ ধরার সুযোগ দেয়া হোক। কয়রা উপজেলার বাসিন্দা হবি মোল্লা জানান, কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে গত ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত পারমিট নিয়েছেন তিনি। এর পরদিন সুন্দরবনের জোড়শিং এলাকায় পৌঁছলে কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদেরকে মাছ ধরতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে যেতে নিষেধ করেন। এতে ওই জেলেরা প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন দাকোপ উপজেলার মৎস্যজীবী হরেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ইসমাইল গাজী, বাসুদেব সাহা, বটিয়াঘাটা উপজেলার মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, কয়রা উপজেলার আশিক হোসেনসহ অনেকে। সুন্দরবনের নলিয়ান রেঞ্জ অফিস এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় প্রায় ৮ হাজার জেলের মৎস্য আহরণ করে থাকে। একইভাবে সুন্দরবন বাগেরহাট অঞ্চলেও প্রায় ১০ হাজার জেলে এ বনের ওপর নির্ভরশীল। সে হিসেবে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার এর ওপর নির্ভরশীল। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. বশীর আল মামুন জানান, মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশে তারা উভয় সংকটে পড়েছেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলেরা। তিনি আরো বলেন, যেসব জেলে ইলিশ ধরে না তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তবে, মাছ না ধরার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল্লাহ আল মুহসীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান সচিব ব্যস্ত রয়েছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, শুধু ইলিশ মাছ ধরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলেরা মাছ ধরতে পারবে। তবে, কেন সুন্দরবনে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।