ইলিশ মাছ ধরতে ও বিক্রিতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে অন্যান্য প্রায় সব মাছের দাম। মাছ ও বাজারভেদে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দাম। তবে বাজারে শিম, টমেটো ও গাজর বাদে সব ধরনের সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। একই সঙ্গে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের বাজার। রাজধানীর হাতিরপুল, কাওরানবাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজারে মাঝারি আকারের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই আকারের রুই মাছের দাম কিছুদিন আগে ছিল ২৬০-২৮০ টাকার মধ্যে। প্রতিকেজি বড় আকারের রুই মাছ ৩৫০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
যা সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিকেজি ৩০০-৩৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর ছোট আকারের রুই মাছ প্রতিকেজি এখন ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকা বা তারও কমে।
গত এক-দেড় মাসে রাজধানীর যেকোনো মাছের বাজারে অন্যান্য মাছের চেয়ে ইলিশের সরবরাহ ও চাহিদা ছিল বেশি। একপর্যায়ে ইলিশ বেশ সস্তা হয়ে যাওয়ায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল কিনতে।
উল্লেখ্য, ইলিশের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে গত ৭ই অক্টোবর থেকে সারা দেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বাজারজাত, সংরক্ষণ ও বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন অন্য মাছ কিনছেন ক্রেতারা। ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ইলিশ না থাকায় অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্নচাপের প্রভাবে কাল থেকে সারা দেশে বৃষ্টি চলতে থাকায় বাজারে আজ মাছের সরবরাহও কম। মাছের দাম কিছুটা বেশি থাকার এটাও একটা কারণ।
এ ছাড়া প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগে এই মাছের দাম ৪০০-৪৫০ টাকাতে নেমে এসেছিল। বিভিন্ন আকারের প্রতিকেজি টেংরা বাজারভেদে ৪৫০-৫৫০ টাকা, শরপুঁটি আকারভেদে ২০০-২১০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া কেজি ১৫০-১৬০ টাকা, পাঙ্গাস কেজি ১৩০-১৫০ টাকা, চাষের শিং ও মাগুর মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিন্তু নিয়মিতভাবেই পাঙ্গাস মাছ ১১০-১২০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ১২০-১৪০ টাকা কেজি, সরপুঁটি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে, বাজারে ডিমের দাম প্রতি হালিতে দাম বেড়েছ এক থেকে দুই টাকা। বতর্মানে বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি হালি ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। আর মাস খানেক আগে হালি ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। শতাংশের হিসাবে ১২.৫ শতাংশ।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সারা দেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে দু’তিন দিন ধরে। তবে, তিতলির প্রভাব পড়েনি রাজধানীর সবজির বাজারে। বাজারে সব চেয়ে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে শিম। মান ভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকায়।
শিমের পাশাপাশি ১০০ টাকার উপরে কেজি বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও গাজর। বাজার ও মান ভেদে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। ফুলকপি প্রতিপিস ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ফুলকপিরর পিস ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব সময় বাজারে পাওয়া যাওয়া বেগুন, উচ্ছে, বরবটি, কাকরল, করলা, পটোল, ঝিঙা, ধুন্দল, ঢ়েঁড়স, লাউয়ের দাম এখন কিছুটা চড়া।
বাজার ভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। উচ্ছের দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি, তবে, করলার দাম কিছুটা কম। এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। বরবটি ৬০-৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া চিচিংগা, পটোল, ঢ়েঁড়স, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহেও এ সবজিগুলোর দাম এমনই ছিল। তবে, কিছুটা কমেছে লাউয়ের দাম। গত সপ্তাহে ৫০-৬০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম কমে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে আগের সপ্তাহের মতো ১৫-২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী নবীন বলেন, রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজির দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। একজন ক্রেতা বলেন, নতুন করে দাম না বাড়লেও অনেক দিন ধরেই বাজারে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। কয়েকটি সবজির কেজি তো ১০০ টাকার উপরে। বাধ্য হয়েই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
এদিকে, দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পিয়াজ, কাঁচামরিচ, বয়লার মুরগির। বাজার ও মানভেদে দেশি পিয়াজ আগের সপ্তাহের মতো ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা ২৫০ গ্রাম। আর বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪২০ টাকা, খাসি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।