× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্ব দৃষ্টি দিবস আজ /চাচার চোখ

শরীর ও মন

ডা. সিদ্দিকুর রহমান
১৩ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার

আমার বন্ধুর বাবা, আবদুুল মতিন সাহেব কয়েকদিন আগে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পাশের ড্রেনে পড়ে যাওয়ার পর জানা গেল চাচার গ্লকোমা হয়েছে। তিনি সোজাসুজি সামনে তাকালে ভালো দেখতে পান বটে কিন্তু গ্লকোম রোগের কারণে ডানে বায়ে কিছু দেখতে পান না। খানিকটা নল বা চোঙ্গার ভিতর দিয়ে দেখার মতোন দেখতে। প্রায়ই তিনি ঘরে বাইরে চলতে ফিরতে কাঁধে বা কনুই এ ধাক্কা খেতেন। সবাই মনে করত বৃদ্ধ মানুষ একটু আধটু চোখে কম তো দেখবেই।
বিষয়টা কিন্তু তেমন ছিল না। তার দুই চোখেই ছানি অপারেশন করে লেন্স লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে প্রায় বছর পাঁচেক আগে।
তার দৃষ্টি শক্তি এখন ৬/৬ বা ২০/২০। দৃষ্টি শক্তির পরিমাপে এটা নরমাল বা স্বাভাবিক দৃষ্টি। এই পরিমাপই সব কিছু নয়। তার চোখের দৃষ্টির পরিসীমা বা ‘ভিজুয়াল ফিল্ড’ কখনোই পরিমাপ করা হয়নি। ভিজুয়াল ফিল্ড এনালাইসিস করলে বোঝা যেত সোজাসুজি সামনে তাকালে তিনি তার ডান বায়ে এবং উপর নিচে একই সাথে কতখানি এলাকা দেখতে পারেন বা বুঝতে পারেন।
গ্লকোমা রোগে এই ভিজুয়াল ফিল্ড বা দৃষ্টির পরিসীমা ক্রমশ কমতে থাকে। খুব ধীরে ধীরে এটি ঘটতে থাকে তাই রোগী এটি সহজে অনুভব করতে পারেন না। এই রোগে সাধারণত ব্যথা বেদনা, পানিপড়া চুলকানো বা লাল হওয়া এসব কোন লক্ষণ থাকে না। বিশেষ করে ‘ওপেন এঙ্গেল’ গ্লকোমা একেবারেই নীরবে আসে, নিভৃতে কাজ করতে থাকে। গ্লকোমা রোগে চোখের দৃষ্টিশক্তি বা দৃষ্টির পরিসীমা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে ‘চোখের আভ্যন্তরীন চাপ’ বা ইন্ট্রা-অকুলার প্রেশার এর একটি বিরাট ভূমিকা আছে।
আমাদের শরীরের রক্তচাপ সম্বন্ধে আমরা সবাই জানি। উচ্চ রক্তচাপ ক্ষতিকর এবং সারা জীবনের রোগ। ওষুধ খেয়ে এবং জীবন যাত্রার মান (খরভব ংঃুষব) পরিবর্তন করে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপও চোখের জন্য ক্ষতিকর। এই চাপ চোখের অপটিক নার্ভ কে ক্রমশ ক্ষয় করতে থাকে, প্রায় বারো লাখ ‘নার্ভ ফাইবার’ বা স্নায়ুতন্তু একটি চোখকে ‘ব্রেইন’-এর সঙ্গে সংযুক্ত করে, চোখের রেটিনার উপর আলোকরশ্মি যে প্রতিবিম্ব তৈরি করে, রেটিনার ‘রড’(জড়ফ) ও ‘কোন’ (ঈড়হব) কোষ এই আলোক শক্তিকে স্নায়ুতরঙ্গে রূপান্তর করে মস্তিষ্কের ‘ভিজুয়াল কর্টেক্স’ এ পাঠায়। এই ভিজুয়াল কর্টেক্সেই আমাদের দেখার অনুভূতি তৈরী হয়। চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপের কারণে এই নার্ভ ক্রমশ নষ্ট হতে থাকে এবং এক সময় মানুষ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়।
মতিন চাচার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। কোনোদিনই তার চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ পরিমাপ করা হয়নি, এই চাপ পরিমাপের পদ্ধতিকে ‘টনোমেট্রি’ বলা হয়। চোখের নার্ভ কি পরিমাণ নষ্ট হলো তা নির্ণয় করার জন্য ঙঈঞ বা অপটিকাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফি টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষায় চোখের নার্ভ এর তন্তু এবং স্তর সমূহ এনালাইসিস করা হয়। এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়। রোগের মাত্রা বুঝে ড্রপ, ওষুধ, লেজার চিকিৎসা অথবা অপারেশন করা হয়।
প্রশ্ন হল রোগী কিভাবে বুঝবেন তার এখন চোখের ডাক্তার এর কাছে যাওয়া দরকার কিনা। মনে রাখবেন চল্লিশ এর উপরে যাদের বয়স তাদের শতকরা ১.২ জন গ্লকোমার আক্রান্ত, আর বয়স ৬৫ এর উপরে শতকরা পাঁচ জন।
লেখক: গ্লকোমা স্পেশালিস্ট, ল্যাসিক ও ফ্যাকো সার্জন
ভিশন আই হসপিটাল, ঢাকা
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর