× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়াল ধ্বসে ৪ জনের প্রাণহানী

অনলাইন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
(৫ বছর আগে) অক্টোবর ১৪, ২০১৮, রবিবার, ৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

শত প্রচেষ্টার পরও চট্টগ্রামে ঠেকানো গেল না পাহাড় ধ্বস। দিন ও রাতে কখনো মাঝারি, কখনো ভারী বর্ষণে ঘটে গেছে পাহাড় ও দেয়াল ধ্বসের ঘটনা। এতে একই পরিবারের মা-মেয়েসহ ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৫ জন। রবিবার সকালে পাহাড় ও দেয়াল চাপা থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন।

তিনি জানান, শনিবার দিনগত রাত দুটার পর পৃথক এই ঘটনা দুটি ঘটে। এরমধ্যে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে নগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায়। দেয়াল ধ্বসের ঘটনাটি ঘটে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকায়।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্র জানায়, ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে শনিবার দিনভর কখনো গুঁড়ি, কখনো মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা টানা বর্ষণে রূপ নেয়। এর মধ্যে রাত সোয়া ২ টার দিকে নগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে একটি বসতির উপর মাটির বড় খন্ড ধ্বসে পড়ে।

এতে নূরজাহান বেগম (৪৫) ও তার আড়াই বছর বয়সী মেয়ে ফয়জুন্নেছা আক্তার ওরফে নূর আয়শা এবং তার মা বিবি জোহরা (৭০) ধ্বসে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে নিহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। রবিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত টানা কাজ চালিয়ে মাটির নিচে চাপা পাড়া অবস্থা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।

নুরজাহানের স্বামী নুর মোহাম্মদ জানান, বিবি জোহরা তার শ্বাশুড়ি। শুক্রবার লক্ষ্মীপুর থেকে বেড়াতে আসেন তিনি। রাতে পাহাড়ের উপর থেকে দুই দফায় মাটির বড় খন্ড ভেঙ্গে বসতির আশপাশে পড়তে দেখে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে যান তিনি। সেখান থেকে ফেরার পর দেখতে পান, তার ঘরের উপর মাটিচাপা পড়েছে।
নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। নূর বানু সবার ছোট। তার বয়স আড়াই বছর। সবার বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলে-মেয়েকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে এসে শ্বাশুড়ি, স্ত্রী ও মেয়েকেও নিয়ে যাব বলে ভেবেছি। এর মধ্যে ঘরের উপর মাটি এসে পড়বে, বুঝতে পারিনি।

স্থানীয়রা জানান, ফিরোজ শাহ কলোনির পাহাড়টি কনকর্ড গ্রুপের। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে তারাও দিনের বেলায় চেষ্টা করেছেন লোকজনকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু অনেকেই ঘর ছেড়ে যেতে চাননি। তবে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন করার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম এ দায় অস্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফয়েস লেকের দক্ষিণে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়টি লিজ নিয়েছে কনকর্ড গ্রুপ। সেখানে পাহাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার আছে। গত ৬ দিন ধরে আমরা সেখানে মাইকিং করেছি। বুঝিয়েছি, উচ্ছেদও করেছি। যে পরিবারটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শিকার হয়েছে তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম দেখে শুক্রবার বিকেলে তারা আবার ফিরে আসে। এর মধ্যে রাতে পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটল।

এদিকে শনিবার দিনগত রাত ২ টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ এলাকার পাহাড়েও একটি ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরের দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন ঘরে বসবাসকারী নূর আলম নান্টু (৩৫)।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ওই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে বলে জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন।

পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. তালেব জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে গিয়েছিল। রাতে ভারী বৃষ্টিপাতের সময় হিলভিউ আবাসিকের রহমান নগরের পাহাড়ে গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় একটি ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে। এতে নান্টু গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া দেয়াল ধসের ঘটনা আরও পাঁচজন আহত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘুর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধ্বসের পূর্বাভাস পাওয়ায় আমরা গত কয়েকদিন ধরেই পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করি। লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, পোড়াপাহাড়, বায়েজীদের ঝুকিঁপূর্ণ পাহাড় থেকে অন্তত ৭ হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু কেউ কেউ জোর করে থেকে যাওয়ায় পাহাড় ও দেয়াল ধসে প্রাণহানীর ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হলো না।

তিনি বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেককে দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের জন্য দায়ী এলাকার প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর