× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

খাসোগি ‘হত্যা’য় প্রচণ্ড ধাক্কা লাগছে সৌদি আরবে

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) অক্টোবর ১৫, ২০১৮, সোমবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক ব্যবসায় সংক্রান্ত ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষ সম্মেলন বর্জন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তুরস্কে সৌদি আরবের কনসুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে ‘হত্যার’ ঘটনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিশ্বের এই দুটি বৃহৎ শক্তি। এ ছাড়া ওই সম্মেলন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া আউটলেট। এর মধ্যে রয়েছে নিক্কি, সিএনবিসি, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ব্লুমবার্গ প্রভৃতি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি ও সিএনএন।
জামাল খাসোগি সৌদি আরবের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর তীব্র সমালোচক। গত বছর সৌদি আরবে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু হলে তিনি স্বেচ্ছায় চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর তুরস্কের এক যুবতীর সঙ্গে তার প্রেম গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তিনি ২রা অক্টোবর প্রবেশ করেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটে।
সেখান থেকে তিনি আর বেরিয়ে আসেন নি। তুরস্ক কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ওই কনসুলেটের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে সেখান থেকে বাইরে নেয়া হয়েছে। এ কাজে সৌদি আরবের বিশেষ একটি এজেন্ট টিমকে নেয়া হয় ইস্তাম্বুলে। তবে সৌদি আরব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু জামাল খাসোগিকে হত্যার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে বলে তুরস্ক জানিয়েছে। এমন কি মৃত্যুর আগে যেসব ঘটনা ঘটেছিল তা জামাল খাসোগি নিজেই রেকর্ড করে গেছেন।

এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। তাতে জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি আরব সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্রাউন প্রিন্স  মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি এতে জড়িত। যদি তা-ই হয় তাহলে এতে সৌদি আরবের রাজপরিবারের ওপর বড় রকমের প্রভাব পড়বে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বেশ কিছু স্পন্সর ও মিডিয়া গ্রুপ এ মাসে অনুষ্ঠেয় ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছেন, ওই সম্মেলনে যোগ নাও দিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভ মনুচিন ও বৃটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী লিয়াম ফক্স। উল্লেখ্য, সৌদি আরবে ওই সম্মেলনটির আয়োজক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এতে তিনি তার গৃহীত সংস্কারমূলক এজেন্ডাকে সবার সামনে তুলে ধরে তা অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

বৃটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনের বিষয়ে লিয়াম ফক্সের ডায়েরিতে কিছু নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় নি। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা জামাল খাসোগিকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তবে যদি খাসোগিকে হত্যা করা হয়ে থাকেই তাহলে এভাবে শুধু কথা বা বক্তব্যই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন জামাল খাসোগির প্রেমিকা হাতিস চেঙ্গিস। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, তাকে যদি আমরা এরই মধ্যে হারিয়েই থাকি তাহলে শুধু নিন্দাই যথেষ্ট নয়। যারা তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ আইনের অধীনে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।

জামাল খাসোগিকে ‘হত্যা’র জন্য ভীষণ ক্ষেপেছেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যদি খাসোগিকে হত্যা করা হয়ে থাকে এবং সৌদি আরব তার জন্য দায়ী হয় তাহলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। যদি তাকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে তা হবে অত্যন্ত হতাশার ও ক্ষোভের কারণ। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে বড় আকারে যে সামরিক চুক্তি রয়েছে তা স্থগিত করার বিষয়টি ট্রাম্প উড়িয়ে দেন। ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে ব্যবসাটা না করি তাহলে তাতে আমাদেরকেই শাস্তি দেয়া হবে। সৌদি আরব যদি আমাদের কাছ থেকে সামরিক অস্ত্র না কেনে তাহলে তারা যাবে রাশিয়া বা চীনে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত কাভুসোগলু বলেছেন, এখনো পর্যন্ত খাসোগিকাণ্ডের অনুসন্ধানে সহযোগিতা করছে না সৌদি আরব। ওদিকে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সাউদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজ বলেছেন, তারা এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ সত্য উন্মুক্ত করতে চান। তাই এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি আরবের কনসুলেটে তুরস্কের কর্মকর্তাদের অনুমতি দেয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবে শেয়ার বাজারেও ছোঁয়া লেগেছে। রোববার সকালে তাদাওয়ুল অল শেয়ারস ইন্ডেক্স শতকরা ৭ ভাগ পড়ে যায়। এতে এ বছর যতটা লাভবান হয়েছিল শেয়ার বাজার তা শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে। তবে দুপুরের দিকে কিছুটা উন্নতি হয় পরিস্থিতির। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, শেয়ার বাজারের দু’ অধিবেশনেই হারিয়েছে ৫০০০ কোটি ডলার। ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলেটন ইমার্জিং মার্কেট ইকুইটির সালাহ শাম্মা বলেছেন, এটা হলো রাজনৈতিক পরিবেশ। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সেন্টিমেন্ট লেগেছে বাজারে। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ওদিকে রিয়াদে অনুষ্ঠেয় ওই অর্থনৈতিক সম্মেলনের স্পন্সরশিপ থেকে সর্বশেষ নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে জাপানের মিডিয়া কোম্পানি নিক্কি। তারা শনিবার সিএনএনকে বলেছে, তারা এখন আর ওই সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার নয়। ব্লুমবার্গ শুক্রবার জানিয়েছে, তারাও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে তারা ওই অনুষ্ঠানের খবর পরিবেশন করবে। একই দিনে একই রকম সিদ্ধান্ত নেয় সিএনএন, সিএনবিসি ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। আর সপ্তাহের শুরুতে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় নিউ ইয়র্ক টাইমস। সব প্রতিষ্ঠানই জানিয়ে দিয়েছে তারা জামাল খাসোগি ‘হত্যাকাণ্ড’কে ঘিরে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর