সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে বাম জোট। গতকাল দুপুরে দুই দফা বাধা পেরিয়ে সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির সময় কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমবেত হন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে লাল পতাকা মিছিল নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও করতে যান তারা।
মিছিলটি পল্টন মোড় অতিক্রম করে সচিবালয়ের গেটের দিকে অগ্রসর হলে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে নেতাকর্মীরা সামনে এগুতে চেষ্টা করলে, দু’পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এর একপর্যায়ে পুলিশ সরে দাঁড়ালে কর্মীদের নিয়ে সচিবালয়ের গেটের দিকে যান বাম জোটের নেতারা।
৫ নম্বর গেটের সামনে আবারও ব্যারিকেড তৈরি করে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুনরায় বাম জোটের কর্মীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙতে উদ্যত হলে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় বাম জোটের নেতাকর্মীদের কয়েকজন আহত হলেও সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। এ সময় বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন জুলুম, দমন, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা সরকারের শক্তি নয়, বরং সরকারের বেসামাল অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। জনগণের ওপর অনাস্থা জেনেই সরকার দমন-নিপীড়নের ফ্যাসিবাদী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, নিজেদের নিরাপত্তা বর্ম হিসেবেই তারা আজ জনগণ ও গণমাধ্যমের ওপর অগণতান্ত্রিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ চাপিয়ে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের দুষ্কর্ম ও সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাট আড়াল করতেই আজ ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপন্থি নিবর্তনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ সংসদে পাস করানো হয়েছে। মূলত মহাজোট সরকারের রক্ষাকবচ হিসেবেই তড়িঘড়ি করে এই আইন করা হয়েছে। যা সরকারকে চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতার পথে ঠেলে দেবে। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স দিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এই বাম নেতা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আজ দেশের প্রত্যেকটা জায়গা দলয়ীকরণ করা হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। তাই আওয়ামী লীগ না করলে বর্তমানে আর সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দলীয়করণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে সাকি বলেন, তারা আজ যেসব কথা বলেন, মনে হয় তারাও আওয়ামী লীগ করেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচনেই নতুন নতুন সংকট তৈরি হয়। এবারও নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে নতুন সংকট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো আর একটি পাতানো নির্বাচন ও ভোট ডাকাতির জন্য এই তড়িঘড়ি করে এই আইন পাস করেছে সরকার। তিনি বলেন, ভোটের আগের দিনে এই স্বৈরশাসক সরকারের ব্যালটে সিল মেরে রাখা, টাকার খেলাসহ নানা দুর্নীতির কথা জানাজানির ভয়ে এই আইন পাস করানো হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা ফকরুদ্দিন কবির আতিক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ। সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি হিসাবে, আগামী ২৩শে অক্টোবর সারা দেশে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং অবাধ-নিরপেক্ষ- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আগামী ২৯শে অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।