× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী /খুচরা আধুলিরা ঐক্য করেছে

প্রথম পাতা

অলিউল আহসান কাজল, মাদারীপুর থেকে
১৫ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ড. কামাল হোসেন খুনিদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে আয়োজিত জনসভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আরো কিছু খুচরা আধুলি মিলেছে, এরা ঐক্য করেছে। তারা কি করতে চায়? তারা কি করতে পারবে? বিকালে কাঠালবাড়ি ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন ও সেতু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, যারা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী আজকে তাদের সঙ্গে দেখলাম ঐক্য করেছেন তিনি, যিনি নিজেকে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী দাবি করেন। সেই কামাল হোসেনের সঙ্গে আরো জুটেছে কিছু খুচরা আধুলি- এরা সব ঐক্য করেছে। আমি কামাল হোসেন সাহেবকে বাহবা জানাই যিনি বড় বড় কথা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তিনি আজকে ঐক্য করেছেন কার সঙ্গে যে বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজকে তাদের সঙ্গেই তিনি ঐক্য করেছেন।
এ সময় তারেক জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে ড. কামালকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ঐক্য করে নেতাও  মেনেছেন!

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় পুনরায় বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া জেলে যাবার পর বিএনপিতে কি একটা লোকও ছিল না যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানো যায়। যে মানি লন্ডারিং মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত এবং পলাতক হিসেবে বিদেশে রয়ে গেছে, তাকেই বিএনপি বানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান। আর সেই  চেয়ারম্যানেরই অধীনে ড. কামাল  হোসেন গং আজ ঐক্য করেছেন। সরকার প্রধান বলেন, বড় বড় নীতির কথা বলেন যারা তারাই আজকে ঐ খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা মরা গাঙে যোগ দিয়েছেন- আজকে কামাল  হোসেন, মান্না, আসম আবদুর রবরা- তারা কিইবা করতে পারবেন বা কি করতে চান?

জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের,  প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া  চৌধুরী এবং মুহম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য  তোফায়েল আহমেদ, আমির  হোসেন আমু, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, নূরে আলম চৌধুরী লিটন এমপি সমাবেশে বক্তৃতা করেন। শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শামসুদ্দিন খান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন তার সরকারের উন্নয়ন সরকারবিরোধী ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের চোখে পড়ছে না। আজকে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ ভাগ, জিনিসপত্রের ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালের মধ্যে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে স্বীকৃতি  পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, তাদের উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতির উন্নয়ন, সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিংয়ের উন্নয়ন। জনগণ পেট ভরে ভাত খাবে, মানুষ সুখে- শান্তিতে থাকবে, সকলে শিক্ষা-দীক্ষা পাবে সেই উন্নয়ন তাদের নয়।

 শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তাই আমি কামাল হোসেনকে বাহবা জানাই তিনি আমাদের দল ছেড়ে গিয়ে নৌকা থেকে নেমে ধানের শীষের মুঠো ধরেছেন, যে ধানের শীষে শীষ নাই, চিটা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। সেখানে তিনি হাত মিলিয়েছেন।
জিয়া পরিবারকে খুনি পরিবার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিবার খুনি পরিবার। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সেখানে আইভি রহমান সহ ২২ জন নেতাকর্মীকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, সেই হত্যার আলামত না  রেখে, সেই হত্যার বিচার যাতে না হয় সেজন্য ‘জজ মিয়া’ নাটক করেছিল তারা। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে।  সেই বিচারে তারা সাজা পেয়েছে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক এবং খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তারেক জিয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৬টা/৭টার সময় খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া যেখানে ১০টা/১১টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না সেই তিনি ৬টা/৭টার সময় ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে পালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। আর তারপরই বিডিআর’র হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটার পেছনে ঐ বিএনপি-জামায়াতেরও হাত ছিল।

বিডিআরের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসার মারা গিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে ডিজি সহ প্রায় ৩৩ জনই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা (বিএনপি  নেতৃত্ব) যে জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নাই। নইলে খালেদা জিয়া  কেন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেল এবং একমাসের মধ্যে আর ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে ফেরে নাই। এর জবাব তাকে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা যে খুনি  সেকারণেই ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যা সহ তারা  যে হত্যা ও সন্ত্রাসের তাণ্ডব চালিয়েছিল তার কোনো তুলনা হয় না। তাদের অপকর্মের কারণেই  দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। এরপর আবার ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি।

তিনি বলেন, তারা ৫শ’ মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, লঞ্চে আগুন, রেলে আগুন দেয়, তাদের অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখনো বহু মানুষ মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ঘরে আলো জ্বালবো এই অঙ্গীকার থেকে আজকে তার সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ৯৩ ভাগ মানুষ আজকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর  জোগান দেয়ায় সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই মানুষ বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। দেশের মানুষ  নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই আজকে বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি, স্থল সীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নৌকাই হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির পথ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পদ্মা  সেতুর কাজ শুরু করেছি ইনশাআল্লাহ আগামীতে সরকারে আসতে পারলে এই কাজ আমরা সম্পন্ন করতে পারবো। সেই সঙ্গে  রেলসেতুও সরকার করে দেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  রেললাইন চলে যাবে একেবারে বরিশাল হয়ে সেই পায়রা বন্দর পর্যন্ত। দক্ষিণাঞ্চলেও রেললাইন  যোগ হবে দক্ষিণাঞ্চলেরও উন্নয়ন হবে। সেই ওয়াদাও করেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আগামীতে আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান, প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সমাপ্ত।

সমাবেশে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামীতে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করুন। শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানে দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আগে মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম যেতে হতো। পদ্মা সেতু কাজ সমাপ্ত হলে দক্ষিণবঙ্গেই শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাদারীপুর জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। সকাল থেকেই জনসভায় স্থলে মাদারীপুর   জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ শরীয়তপুর ও ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। জনসভায় প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয় শিবচর উপজেলাকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মেচন
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, এদিকে পদ্মা সেতুর নাম ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেতুর ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এজন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না  পেরে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তাকে এমডি রাখতে অনেক জায়গা থেকে হুমকি আসে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক। তখন আমি প্রমাণ চাই। কিন্তু, তারা প্রমাণ দিতে পারে না। অনেক চাপাচাপির পরে তারা কিছু কাগজ দেয়। কিন্তু দেখা যায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে আমার সময়ের মন্ত্রী না, খালেদা জিয়ার সময়কার মন্ত্রী।

এরপর নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলাম। লৌহজং উপজেলার মাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর চলমান কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। সকাল ১১টা ১৫ মিনিটের সময় অনুষ্ঠানস্থলে নামফলক উন্মোচন করেন। পদ্মা  সেতুর চলমান কাজের উদ্বোধনের পাশাপাশি রেল সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন ও নদী শাসন প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক,  সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আব্দুল আজিজ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর