× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

যৌন হয়রানির প্রতিবাদের ভিডিও ভাইরাল(ভিডিও)

অনলাইন


(৫ বছর আগে) অক্টোবর ১৫, ২০১৮, সোমবার, ৫:০৫ পূর্বাহ্ন

সম্প্রতি ঢাকায় একটি বাসে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।

শুরুতে কয়েকজন ক্ষমা চাইয়ে বিষয়টি ফয়সালা করতে চাইলেও পরে কয়েকজন ওই ব্যক্তির ওপর চড়াও হন এবং অভিযুক্তকে বাস থেকে নামিয়ে দেন।

পুরো দৃশ্যটি পেছনের আসন থেকে মোবাইলে ধারণ করছিলেন আরেক যাত্রী।

এই ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে দ্রুতই ছড়িয়ে পরে। সেখানে মেয়েটির সাহসিকতাকে যেমন সাধুবাদ জানানো হয়েছে তেমনি আবার আবার এসেছে নেতিবাচক মন্তব্যও।
কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ব্যক্তি বাসে এক নারীর যাত্রীর অনুমতি না নিয়েই মোবাইলে ছবি তুলছে।

পরে ওই নারী প্রতিবাদ জানালে আশেপাশের মানুষজনও ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা চেয়ে ছবি মুছে দিতে বাধ্য করেন।
এর আগে ঢাকার চাঁদনি চক মার্কেটে দোকানিদের দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এক নারী।

শুধু ঢাকায় নয়, প্রতিবাদ হচ্ছে ঢাকার বাইরেও। যেমন কয়েকদিন আগেই সিলেটের মৌলভীবাজারে পৌর পার্কে মায়ের সঙ্গে ফুচকা খেতে যান এক স্কুলছাত্রী।

তখন স্থানীয় বখাটে তাকে দেখে উত্যক্ত করে ছবি তুলতে চাইলে মেয়েটি ওই বখাটের মোবাইল কেড়ে নিয়ে শার্টের কলার ধরে মারধোর করে।
'আমি কিন্তু আমি দমে যাইনি, প্রতিবাদ করেছি'
ঢাকায় আরেকটি ঘটনায় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বীথি হক।

সম্প্রতি মহাখালী ফ্লাইওভারের কাছে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। রাত হয়ে গিয়েছিল। রাস্তাও বেশ অন্ধকার ছিল।

"এমন সময় হঠাৎ একটা ছেলে আমাকে দেখে এমন সব মন্তব্য করলো যেটা সহ্য করার মতো না।"

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আমি কিন্তু আমি দমে যাইনি, প্রতিবাদ করেছি।"

"ছেলেটা প্রথমে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করছিল, আমাকেই উল্টো বিব্রত করার চেষ্টা করেছিল। বলছিল যে, না-আপনাকে দেখে কিছু বলি নাই।"

পরে তিনি পুলিশকে ফোন দেন। আর প্রমাণ রাখার জন্য মোবাইলের ভিডিও চালু করেন।

"পুলিশ আসতে আসতে সেই লোক ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সে আমার প্রতিবাদে ঘাবড়ে গিয়েছিল।
আসলে প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিবাদের বিকল্প আর কিছুই নেই।"

মিস হক বলেন, "রাস্তাঘাটে নারীদের প্রতিনিয়ত এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। একপর্যায়ে আমার মনে হয়েছে, এ বিষয়গুলোকে আজ ছাড় দিলে কাল অন্য কোন মেয়ের সঙ্গে এর চাইতে গুরুতর কিছু ঘটবে।"
'প্রতিবাদের ফলে অভিযুক্তরা ভয়ের মধ্যে থাকে'
সমাজে বখাটের বিরুদ্ধে নারীদের এ ধরণের প্রতিবাদের ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

তার মতে, সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি যদি প্রতিবাদ গড়ে ওঠে তাহলে ইভ-টিজিংয়ের পাশাপাশি নারীর ওপর যৌন হয়রানি ও সহিংসতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, "একসময় মেয়েদের সম্পর্কে বলা হতো যে বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। কিন্তু এখন বিষয়টা দাঁড়িয়েছে, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, মানে নীরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসার।"

কেন এই প্রতিবাদের ঝড় গুলো এখন বেশি আলোচনায় আসছে, সে সম্পর্কে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, "এখন পৃথিবীময় সচেতনতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে। মেয়েরা পাসের হারে ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে। এই বিষয়গুলো তাদের প্রতিবাদের শক্তি যোগাচ্ছে।"

"আর প্রতিবাদ জানানোর কারণে অভিযুক্তরা একটা ভয়ের মধ্যে থাকে যে এমন করে পার পাওয়া যায়না।"

'ফেসবুক থাকায় প্রতিবাদকারী এখন একা নয়'
সাম্প্রতিক সময়ে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মেয়েদের সাহসী প্রতিবাদ জানানোর পেছনে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের বড় ধরণের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

বিবিসিকে তিনি বলেন, "আগে যেখানে একটি প্রতিবাদের ঘটনা একটি গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। এখন সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের ফলে সেটি ছড়িয়ে পড়ছে। যা অন্য নারীদেরও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। এটাও এক ধরণের ক্ষমতা।"

"ফেসবুকের মাধ্যমে সে বোঝে যে সে একা নয়, আমার মতো অন্যরাও আছে। তখন সে এই দ্বিধা, সংকোচ বা ভয় থেকে বেরিয়ে এসে সচেতন হয়ে ওঠে।"

"এই বিষয়গুলো মেয়েটিকে প্রতিবাদ জানানোর শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে। অর্থাৎ শিক্ষা, সচেতনতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার এই তিনটি বিষয় মিলে এই নারীরা এখন আগের চাইতে বেশি সোচ্চার হয়েছে। এই প্রতিবাদটা জারি থাকা জরুরি," বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।


তবে এই ইভ-টিজিংয়ের বিরুদ্ধে শুধু নারীদের নয় বরং সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনার জন্য কোনভাবে যেন মেয়েটিকে দায়ী করা না হয়। পরিবার যদি এই সচেতন ভূমিকা রাখে তাহলে নারীর প্রতি এমন অবমাননার চিত্র পুরোপুরি বদলে যাবে।

এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ঘটনাগুলোকে তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ওপরও তিনি জোর দেন।

তবে নারী নির্যাতন দমাতে যেসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলোর যেন অপব্যবহার না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
নারীদের নিরাপত্তায় হেল্প-লাইন: ১০৯
মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারীদের নিরাপত্তায় একটি ২৪ ঘণ্টা হেল্প-লাইন সার্ভিস চালু করেছে। নম্বরটি হল ১০৯।

এই নম্বরে ফোন করে ইভ টিজিং-সংক্রান্ত অভিযোগ করা যায়।

এছাড়া দেশের আইনের কয়েকটি ধারায় ইভ টিজিং বা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিন মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা রয়েছে।

সূত্র- বিবিসি বাংলা
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর