× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মি-টু আন্দোলন /নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এম জে আকবরের মামলা

শেষের পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
১৬ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার

যৌন হয়রানির অভিযোগকারী সাংবাদিক প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। গতকাল দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ কোর্টে এই মামলা করা হয়। পাশাপাশি অন্য যেসব নারী একই রকম অভিযোগ এনেছেন তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। মামলায় এম জে আকবর বলেছেন, তার বিরুদ্ধে পুরোপুরি মিথ্যা, অসাড়, অসমর্থনীয় ও মানহানির ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে, জ্ঞাতসারে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও বিদ্বেষপূর্ণভাবে ওই অভিযোগ এনেছেন প্রিয়া রামানি। এতে তার যশ ও সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে অপমানিত হয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পরই প্রিয়া রামানি বলেছেন, মামলায় লড়তে তিনি প্রস্তুত। এক্ষেত্রে একমাত্র অস্ত্র হলো সত্য এবং চরম সত্য।
তিনি বলেছেন, মন্ত্রী ভীতি ও হয়রানির মধ্য দিয়ে নারীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চাইছেন।

এম জে আকবরের বিরুদ্ধে প্রথমে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন প্রিয়া রামানি। এরপর অন্য অনেক নারী বেরিয়ে আসেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রেরণা সিং বিন্দ্রা, গজলা ওয়াহাব, শুতপা পাল, অঞ্জু ভারতী, সুপর্না শর্মা, শুমা রাহা, মালিনি ভুপতা, কনিকা গাহলোত, কাদম্বরী এম ওয়াড়ে, মাজলি ডে পুই ক্যাম্প ও রুথ ডেভিড।  তারা যৌন হয়রানি বিরোধী গ্রুপ #মি-টু আন্দোলনে শরিক হয়ে প্রকাশ করতে থাকেন সব কিছু। এ ইস্যুটি পুরো ভারতকে যেন গ্রাস করেছে। সবার মুখে মুখে ফিরছে এই কাহিনী। যৌন হয়রানির অভিযোগে আকবরের পদত্যাগ দাবিও করা হয়। কিন্তু তিনি ওইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন। যখন এ অভিযোগ ওঠে তখন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক, টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক ও বর্তমানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর ছিলেন নাইজেরিয়া সফরে। সোমবার তিনি দেশে ফিরে আসেন। এসেই ওই অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। মিডিয়ার কাছে দেন একটি দীর্ঘ বিবৃতি। জানিয়ে দেন, এসব অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। সাফ সাফ জানিয়ে দেন তিনি পদত্যাগ করবেন না।

উল্লেখ্য, যৌনতাবিরোধী যে মি-টু আন্দোলন শুরু হয়েছে ভারতজুড়ে তাতে সরকারের সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে তার বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। গত সপ্তাহে যৌন হয়রানির জন্য এম জে আকবরকে অভিযুক্ত করে প্রথম তার নাম প্রকাশ করেন প্রিয়া রামানি। তিনি ২০১৭ সালে ‘ভৌগ ইন্ডিয়া’র জন্য একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার শিরোনাম ‘টু দ্য হারভে উইন্সটেইনস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। এ লেখাটির বিষয়ে তিনি আবার টুইট করেন। ওই লেখায়ই তিনি প্রথম কর্মক্ষেত্রে প্রথম হয়রানির বিষয়টি প্রকাশ করেন। তবে মূল লেখায় তিনি কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবে ৮ই অক্টোবর তিনি আরেক টুইটে বলেন, ওই প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে এম জে আকবরকে নিয়ে। তারপর থেকে এম জে আকবরের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে বেশ কয়েকজন নারী সামনে এগিয়ে আসেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন তার অ্যাকাউন্টে এম জে আকবরের কথা উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রভাবশালী সম্পাদকদের মধ্যে এম জে আকবর অন্যতম। তিনি দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য এশিয়ান এইজ পত্রিকার মতো ইংরেজি ভাষার পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি রোববার একটি টুইটে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশ যখন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন এমন সব অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি তাতে প্রশ্ন রেখেছেন, কেন জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এই ঝড় তোলা হয়েছে? এর নেপথ্যে কি কোনো এজেন্ডা আছে?
ওদিকে এম জে আকবর রোববার বিবৃতি দেয়ার পর প্রকাশ্যে কথা বলেছেন সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। তিনি বলেছেন, তার সর্বোত্তম আত্মরক্ষার উপায় হলো সত্য। এম জে আকবর এই অভিযোগকে উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এটা সুস্পষ্ট যে, তাকে একটি রাজনৈতিক মহল সমর্থন দিচ্ছে, যাদের স্লোগান বেটি বাঁচাও স্লোগান প্রতিদিনই অন্তঃসারশূন্যতায় পরিণত হচ্ছে। এম জে আকবরের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই করা হচ্ছে না। প্রিয়া রামানি বলেন, তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হতে পারে এ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন। রোববার তিনি দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে এসব কথা বলেন। এতে তিনি আরো বলেন, তার (আকবর) মতো আমাদের কারো কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নেই। আমরা আমাদের পেশাগত ও পেশাগত জীবনের মূল্যায়ন থেকে কথা বলছি। যেখানে দায়মুক্তির সংস্কৃতি রয়েছে সেই ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করে নারীরা কথা বলছেন অবিশ্বাস্যভাবে।

অন্যদিকে গজলা ওয়াহজাব বলেছেন, তিনি প্রতিদিন পারিবারিক বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। কি ঘটছে তার পুরোটা তিনি অনুসরণ করতে পারছেন না।

ওদিকে রোববার এম জে আকবরের বিবৃতির পরে যেমন কংগ্রেস রাজনীতির আসরে নেমেছে, তেমনই তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে মহিলা সাংবাদিক মহলে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে ট্যাগ করে সাংবাদিক স্বাতী চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন, ‘কী লজ্জাজনকভাবে আপনারা সরকার চালাচ্ছেন! আকবর পদত্যাগ করলেন না। অথচ ১৪ জন মহিলা তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন’। ‘#মি-টু’ আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা সাংবাদিক সন্ধ্যা মেনন বলেছেন, ‘আকবরকে যৌন নির্যাতনকারী বলে যেসব মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আছি।’ যে সাংবাদিকেরা আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন, তাদের অন্যতম, হরিন্দর বাওয়েজা টুইট করেছেন, ‘গত দু’-তিন দশক ধরে যে মহিলারা এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুঝে গিয়েছেন, তাদের নাকি মাথায় থাকবে দেশের সাধারণ নির্বাচন! আকবরের বিবৃতি থেকেই ‘এজেন্ডা’ শব্দটা ধার করে বলতে হয়, লক্ষ্য এখন একটাই- অনেক হয়েছে, আর নয়’! সাংবাদিক বরখা দত্তের কথায়, “অবিশ্বাস্য! সরকার যদি আকবরকে বরখাস্ত না-করে, তাহলে আমাদের উচিত তার সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করা। যে ১৪ জন কথা বলার সাহস দেখালেন, তাদের কিছুতেই হেরে যেতে দিতে পারি না।’’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর