× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করিমগঞ্জে জোড়া খুন /পিতা-পুত্রসহ চার ঘাতকের ফাঁসি, ২১ জনের যাবজ্জীবন

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৭ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার

করিমগঞ্জে মোবাইল সেট চুরি হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাচা ও ভাতিজাকে নৃশংস জোড়া খুনের দায়ে পিতা-পুত্রসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পিতা ও তিন পুত্রসহ ২১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের উপস্থিতিতে আদালতে মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক আবু তাহের এই রায় দেন। রায়ে চার আসামি আল আমিন (৫২), মিজানুর রহমান (৩০), নাজমুল (৩৬) ও স্বপন মিয়া (৩৫) কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দিদার (২৪), গিয়াস উদ্দিন সরকার (৬৯), হাবিবুর রহমান (৫৯), দুলাল (৩৯), ইসরাইল (৫৪), জসিম উদ্দিন (৩২), রফিকুল ইসলাম মেম্বার (৩২), ইসলাম উদ্দিন (৫৯), শাহাব উদ্দিন (৫৪), আশরাফ উদ্দিন (৪৪), কাঞ্চন মিয়া (৩৪), আলম (৩৪), কাঞ্চন (৩২), সেলিম (৩১), লোকমান (৪৯), হারুন (৪৪), সোহেল (২৯), আজাদ (৩০), রোকন উদ্দিন (২৫), রতন (৫২) ও শামীম (৩২) এই ২১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়াও প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ২৫ জনই করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়নের চরদেহুন্দা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আল আমিন মৃত ছবর আলীর ছেলে, মিজানুর রহমান মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আল আমিনের ছেলে, নাজমুল বিছু মিয়ার ছেলে ও স্বপন মিয়া মো. হাছেন আলীর ছেলে। অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে আজাদ, সেলিম ও শামীম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত গিয়াস উদ্দিন সরকারের ছেলে। এছাড়া পুত্রসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আল আমিনের ছোট ছেলে দিদারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে নিহতদের মধ্যে কুবেদ মিয়া (৪০) উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের লাখপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে এবং জাকারুল (১৯) নিহত কুবেদ মিয়ার ভাতিজা ও গোলাপ মিয়ার ছেলে।
২০১২ সালের ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যায় দেহুন্দা পাকা সেতু সংলগ্ন কাঞ্চনের চায়ের দোকান থেকে কুবেদ মিয়ার ভাতিজি জামাই উপজেলার সাগুলী গ্রামের নূরুল্লাহর একটি সিম্পনী ব্র্যান্ডের একটি মোবাইল ফোন সেট চুরি হয়ে যায়।
চা দোকানি কাঞ্চন পরদিন সকালে আসলে মোবাইল সেটটি বের করে দিবেন জানালে পরদিন ২৪শে আগস্ট সকালে নূরুল্লাহ কুবেদ মিয়ার তিন ভাতিজা শফিকুল ইসলাম, জাকারুল ও সাইকুলকে নিয়ে মোবাইল সেটটি আনতে সেখানে যান। তখন চুরি যাওয়া মোবাইল সেটকে কেন্দ্র করে চা দোকানি কাঞ্চন এবং মিজানুর রহমানের সাথে তাদের কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ সময় কাঞ্চন ও মিজানুর রহমানের সাথে তাদের লোকজন যোগ দিয়ে মোবাইল মালিক নূরুল্লাহ ও তার সাথে যাওয়া শফিকুল ইসলাম, জাকারুল ও সাইকুলের উপর হামলা চালায়। হামলা থেকে কোনরকমে নিজেদের রক্ষা করে শফিকুল ও সাইকুল পালিয়ে বাড়িতে যেতে পারলেও জাকারুল ও নূরুল্লাহকে হামলাকারীরা আটকে মারপিট করে। খবর পেয়ে কুবেদ মিয়া বাড়ির লোকজনকে সাথে নিয়ে জাকারুল ও নূরুল্লাহকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে তাদেরকেও ঘেরাওয়ের মধ্যে ফেলে হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। হামলাকারীদের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে কুবেদ মিয়া ও তার ভাতিজা জাকারুল গুরুতর আহত হওয়া ছাড়াও কুবেদ মিয়ার দুই ভাই গোলাপ মিয়া ও জজ মিয়াসহ মোট ৬ জন আহত হয়। কুবেদ মিয়া ও তার ভাতিজা জাকারুলকে উদ্ধার করে প্রথমে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত পৌনে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুবেদ মিয়ার মৃত্যু হয় এবং এর কিছু সময় পর জাকারুলও মারা যায়।

এ ঘটনায় ২৬শে আগস্ট নিহত কুবেদ মিয়ার স্ত্রী সুজাতা আক্তার বাদী হয়ে ২৭ জনের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ডিবির এসআই মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৪ সালের ২১শে আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র (নং- ১৩৫) দাখিল করেন।
সাক্ষ্য-জেরা শেষে মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক মুহাং আবু তাহের চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুন মামলার রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক এবং আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ মামলাটি পরিচালনা করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর