টেকনাফ এখন ধান পাকার মৌসুম। মাঠে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। প্রতিদিন মাঠের পাকা ধান গিলে খাচ্ছে আর নষ্ট করে ফেলছে ইঁদুরের দল। বিশেষ করে রাতের আধারে ইঁদুরের আনাগোনা লক্ষ্যনীয়। কীটনাশক ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেও উপকার পাচ্ছেনা কৃষকরা। এতে অনেক কৃষক সুফল পাওয়ার আগেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপাকে পড়ছেন ।
বুধবার দমদমিয়া এলাকার কৃষক ঠান্ডা মিয়ার ধান ক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৮০ শতক ক্ষেতের পাকনা ধান প্রায় ৭০ ভাগ নষ্ট করেছে ও খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর। আইল ও ধান ক্ষেতের মধ্যখানে অসংখ্য ইঁদুরের গর্ত ও উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।
দমদমিয়া এলাকার কৃষক ঠান্ডা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি দুইশত বা ৫ কানি জমিতে হাইব্রিড ও বিনি ধান চাষ করেছেন। ধানের ফলন ও শীষ দেখে অত্যন্ত উৎফুল্ল হলেও পাকার সঙ্গে ইঁদুরের উপদ্রব অতিষ্ট করে তুলেছে।
শুধু তাই নয় ইতিমধ্যে ৮০ শতক জমির পাকনা ধান ইঁদুরের পেটে চলে গেছে। অনেক স্থানের ধান নষ্ট করে ফেলেছে। ইঁদুরের বিষয়টি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে জানানো হলে ইঁদুর নিধনের কীটনাশক ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তা ব্যবহার করে ইঁদুর কয়েকটা মারা গেলেও সুফল পায়নি। প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর দেখা যায়।
তিনি আরও জানান, 'কানিতে ১০ থেকে বারো হাজার টাকা খরচ করে ধান চাষ করেছেন। এখন ধান পাকতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ইঁদুর ধানগুলো খেয়ে ফেলছে এবং নষ্ট করছে। এতে বিষম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।'
শুধু ঠান্ডা মিয়া নন, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আশপাশের কৃষক জমির হোছন মাঝি, কৃষক শরিয়ত উল্লাহ, কৃষক রশিদ উল্লাহ, মোছনীর নয়াপাড়ার কৃষক মোঃ হাছান, হোয়াইক্যং কাটাখালীর কৃষক আবুল বশর, কৃষক জহির আহমদ, কৃষক মোঃ হোছনসহ অনেক কৃষকরাও।
ইঁদুরের উপদ্রবে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়ছেন তারা। অনেক কৃষকের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে।
উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের কৃষক আবদুল জলিল জানান, 'তিনি আড়াই একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। এখন ধান পাকার মৌসুম। এ অবস্থায় আধা পাকার সঙ্গে সঙ্গে রাতের বেলায় ইঁদুর এসে ধানগুলো নষ্ট করছে। এতে অত্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ছি।'
টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উফশী, হাইব্রিডসহ স্থানীয় বিনি, লেম্ব্র, পাইজামের বিভিন্ন জাতের ধান রয়েছে। প্রতিবছর উৎপাদনের ১০ ভাগ ধান ইঁদুরের কারনে নষ্ট হয়ে থাকে।
তবে এবার যেভাবে ধান নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাতে ক্ষতির পরিমান বাড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
টেকনাফ উপজেলা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলম জানান, মাঠের ধান পাকতে শুরু করছে। এজন্য ইঁদুর থেকে রক্ষা পেতে নিধন অভিযান চলছে এবং কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইঁদুর নিধনের জন্য গর্ত খুঁড়ে কীটনাশক ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যে সকল কৃষক ইঁদুরের লেজ জমা দিবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
তিনি আরও জানান, ইঁদুরের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।