বন্দর উপজেলা পশু সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র শাখা তিনগাঁও অবস্থিত পশু হাসপাতালটি বেহাল। নেই কোনো নৈশপ্রহরী। পশু হাসপাতালে প্রবেশের রাস্তাটি ইটের সলিং হলেও শেওলা পড়ে পড়ে চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার ও ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। তারপর আবার বহিরাগতদের অবস্থান। মাদকসেবী ও বিক্রেতারা সন্ধ্যার পর হাসপাতালে প্রবেশ পূর্বক সেবন ও বিক্রি করে বলে পশু হাসপাতালের ডা. মো. ইমরান হোসেন জানান। দেখার যেন কেউ নেই।
নারায়নগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান একজন দানশীল ও উন্নয়নমুখী ব্যক্তি।
তিনি উপনির্বাচনে এমপি হওয়ার পর ব্যক্তি তহবিল হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন সেক্টরে যে উন্নয়ন করেছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার পর অনেক এমপি হয়েছে তার মতো এমন উদার মনের কাউকে দেখি নাই বলে স্থানীয় যুবলীগ নেতা রমজান আলী জানান। তিনগাঁও পশু হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিনেও কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সরকারিভাবে বা ব্যক্তিগত তহবিল হতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। যার ফলে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবার মানের অবনতি হচ্ছে।
পশু হাসপাতালটিকে আধুনিক রূপ করতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে ভুক্তভোগীরা। দেশ তথা প্রতিটি গ্রাম উঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও পশু হাসপাতাল নামে পরিচিত কেন্দ্রটির কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে গরু পালক আব্দুল আজিজ জানান। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা মিলে বন্দরের খানবাড়ির মো. অহিদ তার ছাগল নিয়ে যায়। চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন এখানে প্রাথমিকভাবে ভালো চিকিৎসা দিয়েছে। ওষুধ দিয়েছে আর কিছু লিখে দিয়েছে। চিকিৎসা সেবা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও ডাক্তার সংকট, গরু বা ছাগলের বীজ দেয়ার স্থানটির অবস্থা করুণ। সরকারিভাবে যে ওষুধ আসে তা অতি নগণ্য বলেও কর্তৃপক্ষ জানান। হাসপাতালের কোনো ডাক্তারকে ফোন করলে ওষুধ নিয়ে যেতে বলেন আর অন্যথায় ডাক্তার আসলে চুক্তি করে আসে। যার কারণে দিন দিন আমাদের বন্দর এলাকায় গরু-ছাগল পালকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গরু বা ছাগলের সমস্যা হলে উপজেলা নিয়ে যেতে বলে। উপজেলায় নিয়ে গেলে তাহলে এখানে পশু সম্পদ কেন্দ্র থাকার কি প্রয়োজন এমন ভাষ্য কিছু সংখ্যাক গরু পালকের। তবে পশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা মিলে ভিন্ন দৃশ্য। হাসপাতালের ডা. ইমরান হোসেন ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) বলেন, আমরাও চাই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দিতে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তা পারি না। প্রাণিসম্পদ দপ্তর তিনগাঁও মাত্র ১ জন ডাক্তার ৯ জন স্টাফ। ৯ জনের মধ্যেও কিছু স্টাফ উপজেলা থাকতে হয়। ২ জন স্টাফ আমরা এখানে থাকি। গেইটে কোন গার্ড ও আলোর ব্যবস্থা নেই। বহিরাগতরা প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করে। রাতে ভুতুড়ে অন্ধকার নগরীতে পরিণত হয়। বীজ দেয়ার সেটটি ভাঙা ছিল, তা নতুন করে লাগানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেখেন আমি একজন মাত্র ডাক্তার এখন ফিল্ডে না গেলে খামারিদের সমস্যা হবে। ৫টি জায়গায় যেতে হবে। মোবাইল ফোনে তাদের গরুর সমস্যা বলার পর ডাক্তার হিসেবে বসে থাকতে পারি না। ফিল্ডে গেলে কোনো গরু বা ছাগল জরুরিভাবে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসা দিতে পারছি না। হাসপাতালে থাকলে ফিল্ডে সমস্যা আর ফিল্ডে গেলে স্টাফদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ওষুধ আসে তা ৩ মাস চলে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। ডা. ইমরান হোসেন বলেন, রাস্তা বা গেটের সমস্যা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন ভাই ইচ্ছে করলে সহজে সমাধান করতে পারে। লাইসেন্স নেই এমন অনেক আছে যারা চিকিৎসা জানে না। অথচ ফিল্ডে তারা ডাক্তার। তাদের চিকিৎসার কারণে গরু বা ছাগলের কোনো সমস্যা হলে তারা কি করবে।
এ বিষয়ে বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পশু হাসপাতালটির অবস্থা খুবই নাজুক। সন্ধ্যার পর স্থানীয় কিছু ছেলে ভিতরে প্রবেশ করে মাদক সেবন করে। যা নিয়ে আমিও একাধিকবার গিয়েছি এবং থানা প্রশাসনকে জানিয়েছি। পুলিশ গিয়ে ধাওয়া দিয়ে আসতে না আসতেই আবারো বসে তাদের আড্ডা। আমার ইউনিয়ন এলাকায় তা হতে দেয়া যাবে না। অচিরেই কঠোরভাবে তা দমন করা হবে। বিষয়টি আমাদের সেলিম ওসমান এমপি মহোদয়কে জানানো হবে। তারপর ব্যবস্থা।