রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত রিপোর্ট এবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হচ্ছে। বৃটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ নয়টি দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ মাসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে ওই রিপোর্ট পেশ করা হবে। যাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বেসামরিক রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নিষ্ঠুরতা চালায় তারা। তাদের হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজের হাত থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন সরজমিন রাখাইন সংকট তদন্ত করে এ বছরের আগস্টে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।
যাতে বলা হয়, বার্মিজ সেনারা গণহত্যার অভিপ্রায়ে রাখাইনে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছে। ওই অভিযানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ও টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য তদন্ত কমিটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কূটনীতিকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীন ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেকোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ রুখে দেবে। তবে তারা নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার বিষয়টিতে বাধা দিতে পারবে না। কেননা, এজন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের কমপক্ষে নয় সদস্যের আপত্তি থাকতে হবে। বাস্তবে যা অনেকটাই অসম্ভব।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, একটি চিঠিতে বৃটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, পোল্যান্ড, পেরু, কুয়েত, আইভরি কোস্ট ও যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে জাতিসংঘের রাখাইন তদন্ত প্রতিবেদন নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করার অনুরোধ করেছে। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমার। মঙ্গলবার রিপোর্ট পেশ করার বিরোধিতা করে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ ডো সুয়ান। এতে দেশটি সতর্ক করে বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হলে তা রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনাস্থা বৃদ্ধি করবে। এই পদক্ষেপকে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে মিয়ানমার বলেছে, এটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।