× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুর্গাপূজায় সেই নাসিরনগর

প্রথম পাতা

পিয়াস সরকার, নাসিরনগর থেকে ফিরে
১৮ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার

বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রসরাজ দাস। এ মাসের ৬ তারিখ। বিয়ের আমেজ কাটতে না কাটতেই বেজেছে দুর্জাপূজার ডাক। বিয়ে, দুর্গাপূজা উৎসব রসরাজ দাসের বাড়িতে। রসরাজ দাস, যার ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর ঘটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

রসরাজ দাসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় পশ্চিমপাড়ায়। এই জেলে পল্লীতে প্রায় ২শ’ পরিবারের বাস। পুরো পল্লী জুড়ে সাজ সাজ রব। উপলক্ষ দুর্গাপূজা।
পল্লীতে রয়েছে চারটি মন্দির। হরি, গৌর, শিব ও কালি প্রতিটি মন্দিরেই বসেছে দুর্গাপূজা। একটি মন্দিরে ধুপ জ্বালছিলেন সিপ্রা রানী দাস। তার বাড়িতে হয়েছিল হামলা। একটি ঘরে থাকা মূর্তি, ধান, শুঁটকি, কাপড় লুটপাট হয়। তবে এখন তারা সুখেই আছেন। তার স্বামী দুর্জন দাস বলেন, আমরা আগের থেকে বেশি ভালো আছি। আগেও আমাদের মাঝে কোনো ঝামেলা ছিল না। এখনো নাই। স্থানীয় বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে রিপন চন্দ্র দাস। তার ক্লাসে এক তৃতীয়াংশেরও কম সনাতন ধর্মাবলম্বী। তিনি বলেন, ঈদের সময় আমার বন্ধুদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেছিলাম। দশমীর দিনে তারাও আমার বাড়িতে আসবে।

প্রতীভা রানী দাস হামলার দিনের কথা জানান। বাজারে মিছিল, বিক্ষোভ ও মসজিদের মাইকের কারণে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন পুরো পল্লীর লোকজন। ৩০শে অক্টোবর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই বিকালে, হামলা হয় রাতে। পুরো গ্রাম শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কোনো মানুষ ছিল না সেদিন গ্রামে। হামলার পর এসে দেখেন দরজা, শোকেস, আলমারি, থালাবাসন ইত্যাদি লণ্ডভণ্ড। খোয়াও গেছে কিছু জিনিস।

পূজামণ্ডপ গুলোতে গানে নাচে মত্ত তারা। পল্লীতে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। দশটি বাড়ির এ মাসের দশটি বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হিসাব করে দেখা যায় গড় বিদ্যুৎ বিল ১৮৭ টাকা। নদীর তীরে ঘনবসতিপূর্ণ এই পল্লীতে কয়েকটি বাড়ি ব্যতীত সব বাড়িই কাঁচা। অধিকাংশের মতো রসরাজ দাসও একজন জেলে। বাবা-মা, দাদা বৌদি ও নতুন স্ত্রীকে নিয়ে রসরাজের বাস।

রসরাজ দাস পা দেখিয়ে বলেন, হাঁটতে পারি না ঠিকমতো। ডাক্তার দেখিয়েছি, অনেক ওষুধ খেলাম তাও ভালো হয় না। রসরাজ জানান, তিনি মাছ ধরছিলেন। তাকে সেখান থেকেই ধরে পুলিশে দিয়ে দেয়। এখন প্রতিমাসে আদালতে হাজিরা দেন। বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। এ ছাড়াও মাছ ধরা ও পুকুরে মাছ চাষ করা আয়ে ভালোই জীবন কাটছে তার।

এই ফেসবুক স্ট্যাটাস কেলেঙ্কারিতে বারবার আসে জাহাঙ্গীর আলমের নাম। তিনি স্থানীয় বাজারে কম্পিউটারের দোকান চালান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মুখেও তার নাম উচ্চারিত হয়। জেলে ছিলেন ৬ মাস। তিনিও নতুন করে শুরু করেছেন নিজের ব্যবসা। আগের ডিভাইসগুলো আদালতের জিম্মায় রয়েছে। কিনেছেন নতুন কম্পিউটার। আগের দোকান ছাড়লেও রয়েছেন পূর্বের ব্যবসাতেই। এখন বসেন বড় ভাইয়ের দোকানে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী আজগর। তিনি এই ঘটানটিকে শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই বলতে নারাজ। তিনি বলেন, আমরা আগেও ভালো ছিলাম এখনো ভালো আছি। আমরা হামলা রুখতে তৎপর ছিলাম। আমাদের চোখ এড়িয়ে হয় হামলাটি। আমাদের সম্প্রীতি অটুট রয়েছে। কিছু সময় আগেই দাওয়াত খেয়ে এসেছি একটি হিন্দু বাড়ি থেকে।

নাসির নগর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. কাউসার বলেন, নাসিরনগরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পূজামণ্ডপ  বসেছে। ১৪৬টি। এখানকার সার্বিক অবস্থা খুব ভালো। গতবছরের তুলনায় এ বছর ৭টি মন্দির বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংখ্যা থেকেও অনুধাবন করা যায় সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তারপরও আমরা যেকোনো ধরনের ঝুঁকি রুখতে তৎপর।
রসরাজ দাসের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর নাসিরনগর সদরেও হামলার ঘটনা ঘটে। শহরের ১১টি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। শ্রী শ্রী শিবমন্দিরে হয় হামলা। হামলার ক্ষত ভুলে এই মন্দিরেও চলছে উৎসব। নাসিরনগরের সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ভালো এই কথার প্রমাণ মেলে বোরকা পরিহিত প্রায় ৮ জন মহিলার দলকে দেখা যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের বিপদে-আপদে-উৎসবে তারা থাকবে। ঠিক তেমনি আমারাও তাদের হাসি-আনন্দ-কষ্টের দিনে পাশে আছি।
নাসিরনগর শ্রী শ্রী শিবমন্দিরে হামলার দিন বাধা দিয়েছিলেন স্থানীয় মুসলমান বাসিন্দারা। নাসিরনগরের মো. মিজবান মিয়া তাদের মধ্যে একজন। হামলা রুখতে উত্তেজিত জনতার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিসহ তার পরিবারের সকল পুরুষ সদস্য। তিনি বলেন, আমরা একই এলাকায় একই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের রক্ষা করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। পায়ে আমার একটি ইট এসে পড়ে। অনেকেই আহত হয়। পূজা কমিটির সদস্য মোহল্লাল দাস বলেন, আমরা বন্ধু মানুষ। ছোট বেলা থেকে এক সঙ্গে মানুষ হয়েছি। এই ঘটনায় আমরা কখনই তাদের দোষ দিই নি। আমরা বন্ধু আছি আজীবন থাকবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর