দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তে ‘নো-ফ্লাই জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কিউং হোয়াকে টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর ফলে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে সিউল ও ওয়াশিংটনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সিউল ও ওয়াশিংটনের মতবিরোধ চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দু’দেশের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে চিড় ধরছে। নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে ওয়াশিংটনের বিরোধিতা তারই ইঙ্গিত। প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশই দাবি করে, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে তারা একই নীতি মেনে চলেন। কিন্তু বাস্তবে দুই কোরিয়ার মধ্যে সামরিক উত্তেজনা হ্রাস ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে মতবিরোধ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মাসে অনুষ্ঠিত পিয়ংইয়ং সামিটে দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বলা হচ্ছে, এ বছরে দুই কোরিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই চুক্তির প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে বলেছে, এতে কোরিয়া উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হবে না। ওই চুক্তিতে দুই কোরিয়া পরস্পরের বিরুদ্ধে বৈরী পদক্ষেপ নেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্তে একটি নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা, পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন ও অসামরিক অঞ্চলে স্থাপিত গার্ডপোস্ট অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই চুক্তির বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কিউং হোয়াকে টেলিফোন করে সরাসরি ওয়াশিংটনের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্রের মধ্যে এমন মতবিরোধের নজির নিকট অতীতে নেই বললেই চলে।
আন্তঃকোরিয়া সামরিক চুক্তি অনুসারে, সীমান্তের মিলিটারি ডিমার্কেশন লাইনের উভয় পাশে ২০ কিলোমিটার করে মোট ৪০ কিলোমিটার ভূ-খণ্ডকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হবে। এর আকাশ সীমায় শুধু নির্ধারিত কিছু বিমান উড়তে পারবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে হেলিকপ্টার, ড্রোন বা বেলুন উড়ানোর ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠার চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তাদের যৌথ মহড়া বাধাগ্রস্ত হবে। দক্ষিণের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন আলাপে পম্পেও এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ক্রিস্টোফার লোগান মন্তব্য না করলেও কোরিয়া উপদ্বীপে সামরিক উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন।