বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘রানমেশিন’ তুষার ইমরান পা রাখলেন নতুন উচ্চতায়। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের রেকর্ড গড়েন ৩৪ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সনে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানের দশ হাজার রানও নেই। ৮৬৯২ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অলক কাপালি। গতকাল জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) তৃতীয় রাউন্ডের চার ম্যাচই ড্রয়ের মুখ দেখে। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় রাউন্ডেও ফলাফল আসেনি। খুলনা বিভাগের হয়ে রংপুরের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পথে ১১ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন তুষার। এনসিএল’র চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে প্রথম রাউন্ডের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডবুকে ঢুকে পড়েন তুষার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইবার জোড়া সেঞ্চুরির নজির স্থাপন করেন তিনি। ১৬৩ ম্যাচে তুষারের মোট রান ১১০২১। ব্যাটিং গড় ৪.০৮। ৩১ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ৫৬ ফিফটি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ২২০ রানের। গতকাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিন শুরু করেন তুষার। ব্যক্তিগত ১০৩ রান করে আউট হন তিনি। ব্যাক-টু-ব্যাক অর্ধশতক করেন জিয়াউর রহমান। ৩৩৪/৯ সংগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে খুলনা। ৩২৪ রানের টার্গেটে নেমে ম্যাচ ড্রয়ের আগে রংপুর বিভাগের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯১/১। ওপেনার জাহিদ টানা দুই ইনিংসেই করেন ৬৪ রান। এর আগে তৃতীয় দিন নিজের করে নেন তুষারের সতীর্থ সৌম্য সরকার। দুই ইনিংসে অর্ধশতক (৭৬ ও ৭১) ও বল হাতে পাঁচ উইকেটের নৈপুণ্যে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন সৌম্য। টিয়ার-১ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে খুলনার ৩০৪ রানের জবাবে ৩১৫ রানে অলআউট হয় রংপুর।
আগের দিন পাঁচ উইকেট নেন আরও দুইজন। সেটি দ্বিতীয় স্তরের এক ম্যাচেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের দেখা পান ঢাকা মেট্রো পেসার তাসকিন আহমেদ ও চট্টগ্রাম বিভাগের অফস্পিনার নাঈম হাসান। গতকাল বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ১৯১/৬ সংগ্রহ নিয়ে শেষ দিনের ব্যাটিংয়ে নামেন মেট্রো। অর্ধশতক করেন শামসুর রহমান (৫২)। ২৫৪/৭ সংগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে মেট্রো। শামসুরকে ফিরিয়ে ষষ্ঠ উইকেট পূর্ণ করেন ম্যাচসেরা নাঈম। ৩০৬ রানের টার্গেটে নেমে ম্যাচ ড্রয়ের আগে চট্টগ্রামের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৯/৩। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন পিনাক ঘোষ। অধিনায়ক মুমিনুল হক করেন ৩২ রান। এর আগে প্রথম ইনিংসে শামসুরের ফিফটি ও জাবিদ হোসের ৯০ রানের সুবাদে ২৮৭ রান করে মেট্রো। জবাবে তাসামুল হকের সেঞ্চুরিতে (১১৬) ২৩৬ রান করে চট্টগ্রাম।
বৃষ্টির কারণে বরিশাল-রাজশাহী ও সিলেট-ঢাকা বিভাগের প্রথম দুইদিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। তবে বরিশালের বিভাগীয় স্টেডিয়ামে প্রথম স্তরের ম্যাচটি রোমাঞ্চ ছড়ায়। আগেরদিন ১৯ উইকেটের পতন ঘটে। বরিশাল বিভাগের ১৩৩ রানের জবাবে রাজশাহী বিভাগের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৫৫ রানে। ৭০ রানের দশম উইকেট জুটিতে রাজশাহীকে লিড এনে দেন মুক্তার আলী (৫৯*) ও আবদুল গফফার (৭)। তিনটি করে উইকেট নেন সোহাগ গাজী ও তানভীর ইসলাম। দুইটি করে পান কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মনির হোসেন। ম্যাচ ড্রয়ের আগে শাহরিয়ার নাফিসের (১০২) সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২৯/৭। তিনটি করে উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম ও সাব্বির রহমান। ম্যাচসেরা হন মুক্তার আলী। কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচে ৩৫৫/৯ সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে সিলেট বিভাগ। জাকির হাসান ৮৮ ও রাজিন সালেহ ৯৬ রান করে আউট হন। অলক কাপালি করেন ৩৬ রান। জবাবে ৫৫/৩ সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচ ড্র করে ঢাকা বিভাগ। প্রথম স্তরের তিন রাউন্ডের খেলাই ড্র হলো। দ্বিতীয় স্তরের প্রথম রাউন্ডে জয় কুড়ায় ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রো। আগামী ২২শে অক্টোবর শুরু হবে চতুর্থ রাউন্ডের খেলা। বরিশালের মুখোমুখি হবে রংপুর। খুলনাকে মোকাবিলা করবে রাজশাহী। চট্টগ্রামের বিপক্ষে নামবে ঢাকা বিভাগ। আর সিলেটকে চ্যালেঞ্জ জানাবে ঢাকা মেট্রো।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা-রংপুর (টিয়ার-১)
টস: রংপুর, ফিল্ডিং। খুলনা: ৩০৪ ও ৩৩৪/৯ ডিক্লে.। রংপুর: ৩১৫ ও ৯১/১ (টার্গেট ৩২৪)। ফল: ড্র
বরিশাল-রাজশাহী (টিয়ার-১)
টস: রাজশাহী, ফিল্ডিং। বরিশাল: ১৩৩ ও ২২৯/৭ ডিক্লে.। রাজশাহী: ১৫৫, ফল: ড্র
চট্টগ্রাম-ঢাকা মেট্রো (টিয়ার-২)
টস: চট্টগ্রাম, ফিল্ডিং। মেট্রো: ২৮৭ ও ২৫৪/৭ ডিক্লে.। চট্টগ্রাম: ২৩৬ ও ১৫৯/৩ (টার্গেট ৩০৬)। ফল: ড্র
সিলেট-ঢাকা বিভাগ (টিয়ার-২)
টস: ঢাকা, ফিল্ডিং। সিলেট: ৩৫৫/৯ ডিক্লে.। ঢাকা: ৫৫/৩। ফল: ড্র