× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল / ইসির বৈঠকে কূটনীতিকদের উদ্বেগ আসছেন ইইউ’র দুই বিশেষজ্ঞ

প্রথম পাতা


১৯ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি’র সক্ষমতা আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে কূটনীতিকরা। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও ইসি’র ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ইসি’র পদক্ষেপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ছিল কূটনীতিকদের। বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সকল প্রকার সহায়তা দিতে প্রস্তুত ইইউ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শিগগিরই ইইউ’র দুজন বিশেষজ্ঞ ঢাকায় আসবেন। তারা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক, বৃটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার, এলভারো ডি সালাস গিমেনিজ ডি আজকারেট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি আন্নি বর্ডিন ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের কূটনীতিকরা এতে অংশ নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি’র প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান কূটনীতিকরা। ইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ইসি’র প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ইসি’র পরিকল্পনা কি তা জানতে চান তারা। এসময় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করছে বলে কূটনীতিকদের জানানো হয়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি’র সক্ষমতার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। ইসি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শতভাগ সক্ষম ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে কূটনীতিকরা। সহিংসতা রোধে ইসি’র প্রস্তুতির কথা জানতে চান তারা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহিসংতা রোধে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইসি। এ জন্য কয়েক ধাপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয় কূটনীতিকদের। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। কূটনীতিকরা জানতে চান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ইসি’র কি পরিকল্পনা রয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে আইন সংশোধন হলে ইভিএম ব্যবহার হবে। সেক্ষেত্রে খুবই সীমিত আকারে তা ব্যবহার হবে। ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও ফলাফল ঘোষণা সম্পর্কেও বৈঠকে আলোচনা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসি’র সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা জানতে চান কূটনীতিকরা। ইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, একদিনে প্রায় দশ কোটির ওপর ভোটারের ভোটগ্রহণ করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ অতীতেও ছিল এবং ইসি তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। ইসি’র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ইসি’র সঙ্গে আলোচনায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর রাখা হচ্ছে বলে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান। নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতীয় নির্বাচনের আগে দুইজন বিশেষজ্ঞ পাঠানোর কথা বলেন তিনি। বৈঠক শেষে ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ঘোষণা, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি পরিকল্পনা করছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সেই সঙ্গে নভেম্বরে ইইউ’র একটি নির্বাচন বিষয়ক ছোট পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবেন। তারা বাংলাদেশে বেশ কিছু সপ্তাহ অবস্থান করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থান কালে এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটির মতো ভোটার রয়েছে। যা বিশ্বের খুব কম দেশেই রয়েছে। তারা একই দিনে ভোট  দেবেন। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। যদিও এত সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোট এই প্রথম হচ্ছে না। ফলে এবারের বাংলাদেশে নির্বাচন ইইউ’র আগ্রহের বিষয়। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। সবকিছু যাতে সুন্দর মতো অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমরা আশা করছি ভোটের দিন কূটনীতিকরা পর্যবেক্ষণ করে অবদান রাখতে পারবেন। এগুলোই মূলত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের  বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমি বাংলাদেশে সফল নির্বাচন কামনা করছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করি- সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।

আশা করি এটি খুবই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। আর আমি মনে করি অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগী নির্বাচন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরি। এটি নিয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ইইউ রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, আমরা আশা করি সকল ভোটার ভোট দিতে আসবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নারী ভোটারদের নিয়েও আলোচনা করেছি। আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসা নিয়ে। এখানে আমরা লিঙ্গ সমতায় জোর দিচ্ছি। আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা বিষয়গুলোতে ক্রমাগত দৃষ্টি রাখবো শেষ পর্যন্ত কি হয়। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবো। যদিও দলটি বেশি বড় হবে না। পর্যবেক্ষক দলে আমরা মূলত পরিমাণের থেকে মানের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তারা মূলত তাদের মূল্যায়ন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন।


পরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ইইউ প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও মুক্ত ভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে ব্যাপারে প্রতিনিধিদল ইসি’র কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশনের যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে, সবগুলো ক্ষমতা প্রয়োগ করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধিদল ইভিএম মেশিন কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন জানিয়েছে যে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করেছি। যদি আইনে অনুমতি দেয় তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে তা কমিশনের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে। ইসি সচিব বলেন, প্রতিনিধিদল নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।

আমরা জানিয়েছি যে, বর্তমানে ১১৯টি স্থানীয় পর্যবেক্ষক রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চাইবেন তাদের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালা অনুসরণ করে আসন্ন নির্বাচনে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধিদল জনবল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে জানতে  চেয়েছেন। ইসি জানিয়েছে যে, সংবিধানে যে ক্ষমতা দেয়া রয়েছে সে অনুযায়ী প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবল থাকবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। ইসি সচিব বলেন, তারা ভোটার তালিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ইসি জানিয়েছে যে, আমাদের খুব স্বচ্ছ একটি ভোটার তালিকা রয়েছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, যে নীতিমালা রয়েছে, তা মেনে ইসি সকল পর্যবেক্ষককে স্বাগত জানাবে।

ইসি সচিব বলেন, তফসিলের বিষয়ে প্রতিনিধিদল প্রশ্ন করলে, কমিশনার জানিয়েছে যে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে। ইসি সচিব বলেন, বৈঠকে নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে আলোচনায় প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছু সহিংসতা হয়েছে। তা তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর