× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গোয়াইনঘাটে খলিলের সবজি চাষ

বাংলারজমিন

মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট (সিলেট থেকে
২০ অক্টোবর ২০১৮, শনিবার

গোয়াইনঘাটে গহিন পল্লী পান্তুমাই। চারদিকেই যেন নিরবতার ছাপ। পাশেই ভারতের মেঘালয়ের বিস্তৃত দীর্ঘকায় সবুজ পাহাড়। এখানেই অবস্থিত পান্তুমাই মায়াবতী ঝরনা। সেই ঝরনা মায়া টানে এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটতো পর্যটক, দর্শনার্থীদের। পাহাড়, ঝরনার আর সবুজে ঘেরা সেই গহিন গ্রামে রচিত হয়েছে আরেকটি গল্প। সফলতার সেই গল্পের নায়ক একজন ভূমিহীন কৃষক। ভূমিহীন সেই কৃষক ব্যক্তিটি এখন উপজেলার সেরা সবজিচাষি।
শুধু সবজিচাষি বললে ভুল হবে। তার যোগ্যতার মানদণ্ডকে তুলনা করতে হবে অনন্য একজন সৎকর্মশীল মানুষের সঙ্গে। যাকে নিয়ে এ বন্দনা তিনি হলেন কৃষক খলিলুর রহমান। সরজমিন পরিদর্শনকালে কৃষক খলিলুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় সফলতা আর দরিদ্র জয়ের গল্প। উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতিরখাল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক খলিলুর রহমান। এক সময় তিনি ছিলেন পিয়াইন নদীর একজন বারকি শ্রমিক। হিম শীতল পিয়াইনের বুক থেকে ডুব দিয়ে পাথর আহরণের কঠিন শ্রমে অর্জিত টাকায় চলতো তার সংসার। অভাব অনটন আর টানাপড়েনেই আবদ্ধ ছিল তার সংসার। অত্যন্ত পরিশ্রান্ত পরিবেশে বারকি শ্রমিকের কাজ তার একসময় বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০০৪ সালে সিদ্ধান্ত নেন এ পেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে। স্থির করেন নিজেকে কৃষি কাজে জড়াতে। কিন্তু নিজের জমি না থাকায় এ কাজে থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি খলিল। ইচ্ছে শক্তির প্রেরণা থেকেই পরিকল্পনা মাফিক চলে তার কৃষিতে অন্তর্ভুক্তির পদচারণা। তারুখাল গ্রামের হেলাল নামের ব্যক্তির ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ। এখানেই রচিত হয় তার পঠভুমি। আস্তে আস্তে এগিয়ে যান হেলাল। পাথর কাজ ছেড়ে একজন নবীন কৃষক হিসেবে
নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয় কৃষক খলিলুর রহমানকে। পোকার আক্রমন,রোগ বালাই কিংবা ওষুধ প্রয়োগে অপরাপর কৃষকের সহযোগিতা চাইলে তিনি সহযোগিতা পেতেন না,আবার কেউ কেউ ভুল পরামর্শও দিত। এতে করে আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্থও হতেন তিনি। এভাবে দিন, মাস বছর পেরিয়ে এক সময় আসে সফলতা। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সেই ২০০৪ থেকে শুরু করে এখনো চলছে কৃষিতে তার ছুটে চলা। এলাকায় নিজেকে
তিনি মেলে ধরেন একজন সফল কৃষক হিসেবে। সোমবার তার রোপায়িত ফসলের মাঠ পরিদর্শনে গেলে ফুটে ওঠে কৃষিতে তার নিপুণ কাজের নানা সফলতার দৃশ্য। তার রোপায়িত সবজি ক্ষেতের যেন শেষ নেই। পশ্চিম জাফলংয়ের পান্তুমাই, জয়নগর, তারুখালসহ বেশকটি স্থানের মানুষজনের পতিত অনাবাদি জমিকে তিনি বর্গা নিয়ে করেছেন আবাদি। সেখানে তিনি শ্রমিক লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন শসা, মিষ্টি লাউ, ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, নাগা মরিচ, ডাটাশাক, মাষকলাই, ধনেপাতাসহ নানা জাতের শাক-সবজি। বেশকটি বিস্তৃত ফসলের মাঠে তার এমন সবুজ বিপ্লব যেন হাতছানি। চলতি বছরে তিনি ২৭ বিঘা জমি বর্গা চাষ করে এসব জমিতে হরেক রখমের শাক সবজি রোপন করেছেন। কোথাও আবার একটি ক্ষেতে দ্বৈত ফসলও বুনেছেন।  প্রতিদিন তার রোপায়িত ফসলের মাঠে ১৪জন দিন মজুর  ৩০০ টাকা হারে (প্রতিদিন) দিন শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কাকডাকা ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কৃষক খলিল চষে বেড়ান ফসলের মাঠে। পোকা,মাকড়ের আক্রমণ, রোগাবালাই প্রতিরোধে তার দৃষ্টি যেন সব সময় সজাগ থাকে। এ পর্যন্ত তার ক্ষেত থেকে উৎপাদিত ফসল থেকে তিনি ৬ লাখ টাকার শসা,লাউ বিক্রি করেছেন। তার উৎপাদিত সবজির ক্রেতারা হলেন সিলেটের পাইকারগণ। তারা  খলিলুর রহমানের  উৎপাদিত শাক,সবজি ক্রয় করেন উৎপত্তিস্থল থেকেই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর