ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি মনে করছেন যে, নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক খাসোগি মারা গেছেন। আর এমনটি ঘটলে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ হবে খুবই কঠোর। তবে খাসোগির সঙ্গে আসলেই কি ঘটেছে তা উদঘাটনের বিষয়ে এখনো আশাবাদী তিনি। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগির রহস্যজনক অন্তর্ধান নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খাসোগি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এ বিষয়ে সব পক্ষই মোটামুটি নিশ্চিত। এখন তার দেহাবশেষ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তুরস্কের পুলিশ। বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে একটি বাগানে ও মারমারা সাগরের কাছে একটি শহরে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
তুরস্কের দু’জন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ অভিযানের খবর নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন যে, খাসোগিকে হয়তো হত্যা করা হয়েছে। খাসোগি আসলেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আমার কাছে তেমনটিই মনে হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’ এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রগুলোও বলছে, খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন। তবে হত্যাকাণ্ডের পিছনে কে দায়ী, এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ কৌশলী ভূমিকা নেন ট্রাম্প। জানান, এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসার সময় হয়নি। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কি হবে-এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটা খুবই খারাপ কাজ। আমাদের খুবই কঠোর হতে হবে।’
তুরস্ক ও সৌদি আরব সফর শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার তার সফর নিয়ে ব্রিফিং করেন। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে পম্পেও খাসোগি’র নিখোঁজ নিয়ে তদন্ত করার জন্য সৌদি আরবকে আরো কয়েকদিন সময় দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের উদ্ধৃতি দিয়ে পম্পেও বলেন, সৌদি আরবের তদন্ত শেষ হলে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারবো যে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কী ও কিভাবে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তবে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আসলেই কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে পম্পেও বলেন, ‘আমাদের এটা স্মরণ রাখা জরুরি যে, সৌদি আররেব সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ১৯৩২ সাল থেকে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে।’ এছাড়া, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রকে হত্যাকাণ্ডের রেকর্ডিং দেয়নি তুরস্ক
খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ‘রেকর্ডিং’ চেয়ে ট্রাম্পের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি তুরস্ক। দেশটি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, ওয়াশিংটনকে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেবে না আঙ্কারা। তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুক কাভুসোগ্লু বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। এর আগে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ডিং সরবরাহ করেছে তুরস্ক। কিন্তু মেভলুত কাভোসোগ্লু এ খবর নাকচ করে দেন। বলেন, চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে তুরস্কের হাতে খাসোগি’র অন্তর্ধানের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে এর ফলাফল স্বচ্ছতার সঙ্গে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া হবে।
সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলন বয়কট করলো যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও আইএমএফ
নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্সের পর এবার যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনও সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশ দুটি ঘোষণা করেছে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ নিউচিন ও বৃটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স মরুভূমির ড্যাভোস খ্যাত এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। এছাড়া বুধবার আইএমএফের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সংস্থাটির প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা ছিল আইএমএফ প্রধানের। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডে দেশটির সরকারের সম্পৃক্ততা দিনদিন স্পষ্ট হয়ে ওঠার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।