দুবাই টেস্টে ১৪০ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচায় অস্ট্রেলিয়া। আবুধাবিতে পাকিস্তানের বোলিং তোপে অজিরা টিকলো মাত্র ৫০ ওভার। আর রেকর্ড গড়ে ১-০ ব্যবধানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতে নিলো সরফরাজ আহমেদের দল। গতকাল শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৭৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় পাকিস্তান। যা পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়। আর অস্ট্রেলিয়ার এটি চতুর্থ বাজে হার। পাকিস্তানের আগের রেকর্ডটিও ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। চার বছর আগে আবুধাবিতেই ৩৫৬ রানে হার দেখে অজিরা।
টেস্টে রানের হিসেবে অজিদের সবচেয়ে বড় হার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (৬৭৫)। দেড়দিন হাতে রেখে শেষ হয় আবুধাবি টেস্ট। ৫৩৮ রানের বিশাল টার্গেটে ১৬৪ রান করতে সমর্থ হয় অজিরা। দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেটের কীর্তিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আব্বাস। আবুধাবিতে আগামী ২৪শে অক্টোবর শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। চোটের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে পারেননি অজি ওপেনার উসমান খাজা। ৪৭/১ সংগ্রহ নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে টিম পেইনের দল। আব্বাসের বোলিং তোপে ৭৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে অজিরা। একে একে সাজঘরে পাঠান অ্যারন ফিঞ্চ (৩১), ট্রাভিস হেড (৩৬), মিচেল মার্শ (৫) ও অধিনায়ক টিম পেইনকে (০)। ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের জুটি গড়েন মার্নাস লাবুশেন ও মিচেল স্টার্ক। স্টার্ককে (২৮) এলবিডব্লিউ করেন লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ। আব্বাসের পঞ্চম শিকার লাবুশেন (৪৩)। আব্বাসের পেসের সঙ্গে স্পিন ঘূর্ণিতে ৩ উইকেট নেন ইয়াসির। প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান করে পাকিস্তান। ওপেনার ফখর জামান ও অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ দুইজনই ব্যক্তিগত ৯৪ রানে আউট হন। জবাবে আব্বাস-আসিফের বোলিং নৈপুণ্যে মাত্র ১৪৫ রানে শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। আব্বাস পাঁচ উইকেট ও অফস্পিনার বিলাল আসিফ নেন ৩ উইকেট। ৪০০/৯ সংগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন বাবর আজম (৯৯)। ৮১ রান করেন সরফরাজ। দুই ম্যাচ সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক আব্বাস (১৭)। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১০ টেস্টে তার উইকেট ৫৯টি। আব্বাসের প্রশংসা করে অজি বোলিং কোচ ডেভিড সেকার বলেন, ‘আব্বাসের বোলিং খুবই নিখুঁত। আমাদের বেশি প্রস্তুতি ছিল পাকিস্তানের স্পিন বোলিং নিয়ে। কিন্তু তাদের পেস বোলিং আমাদের চমকে দেয়।’ আবুধাবি টেস্টে ১০ উইকেট নিয়ে একাধিক রেকর্ডে নাম লেখান আব্বাস।
রেকর্ড
* সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথম পেসার হিসেবে এক টেস্টে ১০ উইকেটের রেকর্ড গড়েন আব্বাস। আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের জুনায়েদ খানের (৮ উইকেট, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৩ সালে)।
* সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথম পেসার হিসেবে টেস্ট সিরিজে ১৫ উইকেটের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন আব্বাস। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ১৪ উইকেট নেন পাকিস্তানের উমর গুল। এর দুই বছর পর লঙ্কানদের বিপক্ষেই তিন ম্যাচ সিরিজে ১৪ উইকেট নেন জুনায়েদ খান।
* পাকিস্তানের হয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক আব্বাস। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ উইকেট নেন মোহাম্মদ আসিফ।
* এশিয়ায় টেস্ট সিরিজে কমপক্ষে ১৫ উইকেট নেয়া এশিয়ান পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং গড় আব্বাসের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার বোলিং গড় ১০.৫৮। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানেও পাকিস্তান পেসারের জয়জয়কার। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০.৭৬ গড়ে বোলিং করেন মোহাম্মদ আসিফ। আর ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ওয়াকার ইউনুসের বোলিং গড় ছিল ১০.৮৬।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: পাকিস্তান (ব্যাটিং)
পাকিস্তান: ২৮২ ও ৪০০/৯ ডিক্লে.
অস্ট্রেলিয়া: ১৪৫ ও ৪৯.৪ ওভারে ১৬৪ (টার্গেট ৫৩৮)
ফল: পাকিস্তান ৩৭৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ আব্বাস
সিরিজসেরা: মোহাম্মদ আব্বাস