মানসিক হতাশা আর শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। নাজমুল হোসাইন (২২) নামে ওই শিক্ষার্থী ইবির আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সাদ্দাম হোসেন হলে নিজ কক্ষে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
সহপাঠিরা জানান, নাজমুল সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার বরাত গ্রামের আবদুল মালেক গাজীর ছোট ছেলে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি খুব আনমনে ছিলেন। শারিরীক অসুস্থতার জন্য প্রায়ই ডাক্তার দেখাতেন। গত বুধবারও কুষ্টিয়ায় এক চোখের ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছে। তার শ্বাস কষ্ট, চক্ষু রোগ, প্রেসারসহ বিভিন্ন রোগ ছিল বলে জানিয়েছে নিহত নাজমুলের বড় ভাই দেলওয়ার হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মচারী মিজানুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে ছেলেটা আমাদের কাছে আসতো। ডাক্তার তাকে সব কিছু জিজ্ঞেস করতো। কোন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলেও না করতো। শুধুমাত্র বলতো, আমি খুব টেনশনে আছি। আমার কোন কিছু ভালো লাগে না।
এদিকে শুক্রবার বিকেল থেকে নাজমুল তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। সন্ধায় ফেরার সময় তিনি বলেছিলেন, আজ খুব টেনশনে আছি। দুইটা সিগারেট খাবো আজ। এর আগে তিনি হলের ডাইনিং বয়কে ডেকে খাবারের বকেয়া পরিশোধ করেন। পরে রাত ৭টার দিকে রুমে ফিরে যান। সাড়ে ৭টার দিকে বন্ধু নাদিম তার রুমে গিয়ে ভেতর থেকে আটকানো পান। এ সময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন তিনি রশিতে ঝুলছেন। পরে আশেপাশের রুম থেকে অন্যরা ছুটে এসে তাকে নামিয়ে মেডিকেলে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার বদিউজ্জামান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মরদেহ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে নাজমুল তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেয়। এতে সে লিখে ‘একটা রিক্সা চাই, শৈশব ও কৈশোরে ফিরে যাবার জন্য।’ এর আগেও সে তার পিতামাতাকে নিয়ে আবেগময়ী স্ট্যাটাস দিয়েছিল।
এ নিয়ে গত এক বছরে ইবিতে ৫ জন আত্মহত্যা করলো। এদের মধ্যে ৩জন প্রেমঘটিত, একজন অভাবে আর নাজমুল হতাশায় আত্মহত্যা করেছে। একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। গত এক বছরে তারা কোন সচেতনতামূলক সভা, সেমিনার বা কোন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে এ দাবি উঠলেও তারা এখনো বিষয়টি আমলে নেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, রাতে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য লাশ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে লাশ ময়না তদন্ত করা হয়নি।